নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৮ এএম
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি) জাইকা এবং সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সহযোগিতায় ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ‘নগর পরিচালন ও স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন। এতে সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, পৌর ও সিটি করপোরেশন প্রতিনিধিরা, বেসরকারি খাত, নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। সবার অভিন্ন লক্ষ্য - দেশের নগর ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও গতিশীল করা।
উদ্বোধনী পর্বে এলজিডি, জাইকা এবং সুইস দূতাবাসের প্রতিনিধিরা বক্তব্যে উন্নত নগর শাসন, পৌরসভার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে সফল মডেলগুলোর প্রসারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এসময় এলজিডির যুগ্ম-সচিব ও ‘প্রবৃদ্ধি’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালাপক মো. ওয়াহেদুর রহমান প্রকল্পটির পৌর সক্ষমতা উন্নয়ন ও স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের কথা তুলে ধরেন।
জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণে জাপানের দীর্ঘদিনের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন। সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে ডেপুটি হেড অব মিশন ও হেড অব কো-অপারেশন দীপক এলমার বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড প্রতিযোগিতামূলক, স্থিতিশীল ও নাগরিকবান্ধব নগর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে’।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মো. মাহমুদুল হাসান, এনডিসি মহাপরিচালক, পরিকল্পনা, পরিবীক্ষন, মূল্যায়ন, ও পরিদর্শন অনুবিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্যে পৌছে যেতে কার্যকর ও সুশাসিত পৌরব্যবস্থার গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। স্থানীয় সম্পদ আহরণ, সেবাদানে দক্ষতা বাড়ানো এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি—এসবের জন্য শক্তিশালী স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য।’
তিনি সিটি করপোরেশনগুলোর শাসনব্যবস্থা উন্নয়নে C4C 2 প্রকল্পের প্রস্তুত করা ‘স্ট্র্যাটেজি ফর গভর্নেন্স অব সিটি করপোরেশনে’র প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে C4C 2 –র উদ্ভাবিত বার্ষিক সিটি গভর্ন্যান্স অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতিকে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, ‘প্রবৃদ্ধি ও C4C 2 –এর কার্যক্রম দেখিয়েছে—পদ্ধতিগতভাবে পৌর সক্ষমতা উন্নয়ন করলে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক সুফল ও শাসনব্যবস্থার উন্নতি আসে। এসব পদ্ধতি বিস্তৃতভাবে প্রয়োগ করা গেলে জাতীয় পর্যায়ে স্থানীয় উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।’
উদ্বোধনী সেশনের পর প্রবৃদ্ধি ও C4C 2 প্রকল্প প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন পৌরসভার প্রতিনিধি তাদের অর্জন তুলে ধরেন। বগুড়া, শিবগঞ্জ, ভৈরব, যশোর ও কুষ্টিয়ার প্রতিনিধিরা রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, সেবা প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন, নাগরিকবান্ধব কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকীকরণসহ মাঠপর্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। আলোচনায় আসে অর্থনৈতিক জরিপ, হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন, ডিজিটাল বিলবোর্ড ও কমিউনিকেশন সিস্টেম, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে সেবা ডিজিটালাইজেশন এবং নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে উইমেন’স বিজনেস কর্নারের সাফল্য।
দিনজুড়ে বিভিন্ন বাজেট ও আর্থিক প্রতিবেদন পদ্ধতি, সিটি গভর্ন্যান্স অ্যাসেসমেন্ট, পারফরম্যান্স সূচক, এবং ঢাকা উত্তর, খুলনা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হয়। বক্তারা তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত, সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিতা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং প্রকল্পসমূহে তৈরি এলইডি টুল–পদ্ধতির ব্যবহারিক প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সভায় প্লেনারি সেশনে নগর শাসন শক্তিশালী করার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা হয়। বিডা, বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, এলজিডি এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, পারফরম্যান্সভিত্তিক সম্পদ বরাদ্দ পদ্ধতি এবং দীর্ঘমেয়াদি পৌর সংস্কার কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর মতামত দেন।
সমাপনী পর্বে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরবর্তী ধাপ, পরিকল্পনা–বাজেট প্রক্রিয়া উন্নয়ন এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিস্তারের কৌশল তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে এলজিডি, জাইকা ও সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশে দক্ষ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর শাসন গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
এজেড