images

অফবিট

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কী?

ফিচার ডেস্ক

০২ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা হলো একটি আন্তর্জাতিক নৌ উদ্যোগ, যা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ প্রদর্শনের জন্য পরিচালিত হচ্ছে।

মূল উদ্দেশ্য

ফ্লোটিলার মূল লক্ষ্য হলো গাজার উপকূলে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য মানবিক সরবরাহ পৌঁছে দেওয়া। এছাড়া এটি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

অংশগ্রহণকারী

বিভিন্ন দেশের বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকার কর্মীরা ফ্লোটিলায় অংশ নেন। ফ্লোটিলাতে ব্যবহৃত জাহাজগুলো গ্রিক, ফিনিশ, স্প্যানিশসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা বহন করে। 

পদ্ধতি

ফ্লোটিলার জাহাজগুলো শান্তিপূর্ণভাবে গাজার উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। এই অভিযান ইসরায়েলি নৌ অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানানো এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রদর্শনের প্রতীক।

gaz26

সাম্প্রতিক ঘটনা

বৃহস্পতিবার, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অংশগ্রহণকারী একটি গ্রীক পতাকাবাহী জাহাজ মাইকেনো গাজার আঞ্চলিক জলসীমায় প্রবেশ করেছে। ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুসারে, ইসরায়েলি বাধার মধ্যদিয়ে জাহাজটি নিরাপদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক নীতি এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইউকিপিডিয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সম্পর্কে যা বলছে

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কখনও কখনও গ্লোবাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা নামেও পরিচিত। যা একটি আন্তর্জাতিক নাগরিক উদ্যোগ। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি গঠিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। ফ্লোটিলার নাম এসেছে সুমুদ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘অটলতা’ বা ‘অবিচল সহনশীলতা’।

আরও পড়ুন: গাজার জলসীমায় ঢুকে পড়েছে ফ্লোটিলার একটি নৌকা

এই উদ্যোগটি ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সুমুদ নুসান্তারার যৌথ আয়োজনে গাজা যুদ্ধের সময় শুরু হয়। ফ্লোটিলায় ৪০টিরও বেশি জাহাজে ৪৪টিরও বেশি দেশের প্রায় ৫০০ অংশগ্রহণকারী যোগ দেন। এটি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নাগরিক-নেতৃত্বাধীন নৌবহর হিসেবে বিবেচিত।

২০১০ সালের আগে কয়েকটি প্রচেষ্টা সফল হলেও পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী একের পর এক জাহাজ আটক বা আক্রমণ করে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৫ সালের মে মাসে ড্রোন হামলা, এবং জুন ও জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক জলে অভিযান। ১ অক্টোবর ২০২৫-এর হিসাব অনুযায়ী ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি জাহাজ ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে। বাধা দিতে ইসরায়েল নৌজাহাজ পাঠিয়েছে এবং জাহাজগুলো আটক করতে শুরু করেছে।

gaze

ফ্লোটিলা ২০২৫ সালের আগস্টের শেষ দিকে ওত্রান্তো, জেনোয়া ও বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে কাতানিয়া, সিরোস ও তিউনিস থেকেও বহর রওনা হয়। শুরুতে তীব্র ঝড় ও প্রবল বাতাসের কারণে কিছু বহরের যাত্রা বিলম্বিত হয়। ৩ সেপ্টেম্বর ইতালীয় বহর সিসিলিতে পৌঁছায় এবং তিউনিসিয়ার জাহাজগুলো তিউনিসে একত্রিত হয়। চার দিন পর স্প্যানিশ বহরের একটি অংশ উত্তর তিউনিসিয়ায় পৌঁছায়, যেখানে ৯ সেপ্টেম্বর ভোরে একটি প্রধান জাহাজে আগুন ধরে যায়, যা ড্রোন হামলা বলে সন্দেহ করা হয়। পরের রাতেই আরেকটি জাহাজে দ্বিতীয় অগ্নিসংযোগ হামলা ঘটে।

১৯ সেপ্টেম্বর স্প্যানিশ ও তিউনিসিয়ান বহর একত্রিত হয়ে সিসিলি থেকে গ্রিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ২২ সেপ্টেম্বর গ্রিক বহর মিলোস থেকে ক্রিটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং পরদিন সেখানে পৌঁছায়। ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ১১টি জাহাজে ড্রোন হামলা চালানো হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ক্রিটে বহরগুলো একত্রিত হয়ে গাজার দিকে যাত্রা অব্যাহত রাখে।

এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন এক ডজনেরও বেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ, ইতালির রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল, স্পেন ও পর্তুগালের সংসদ সদস্যরা, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেসকা আলবানেসে। এর বিপরীতে, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির দাবি করেন, অংশগ্রহণকারীদের সন্ত্রাসী হিসেবে কারারুদ্ধ করা উচিত এবং ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্লোটিলা থামানোর অঙ্গীকার করে।

sdfg-1

ফ্লোটিলার ওপর হামলার জবাবে ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইতালীয় নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠায় সহায়তার জন্য এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ উদ্ধার অভিযানের প্রয়োজনে একটি স্প্যানিশ নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করেন। ফ্লোটিলা গাজার কাছাকাছি পৌঁছালে নৌবাহিনীর জাহাজগুলো পিছু হটে যায়। তবে তুরস্কের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, প্রয়োজনে তারা ফ্লোটিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে থাকবে।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ট্রেকার (global sumud flotilla tracker)

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বহরে জাহাজগুলোতে ট্রেকিং করতে পারবেন এই লিংকে। 

এজেড