images

জাতীয়

সম্মাননায় আপ্লুত ডিআরইউর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৬ মে ২০২৩, ০৯:২৪ পিএম

হাঁটি হাঁটি পা পা করে ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রতিষ্ঠার ২৮ বছরে পা দিয়েছে। পেশাদার সাংবাদিকদের বৃহৎ এই সংগঠনটি যাদের হাত দিয়ে যাত্রা শুরু করে সেই প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের সম্মাননা জানাল বর্তমান কমিটি। 

শুক্রবার (২৬ মে) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ২৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এই সম্মাননা জানানো হয়। এসময় প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যরা সম্মাননা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। একইসঙ্গে এই সংগঠন শুরুর গল্পও শোনান নতুন সদস্যদের।

তারা দলমতের উপরে থেকে ডিআরইউ ঐক্যের পথে হাঁটবে, পাশাপাশি পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য কাজ করবে- এমন প্রত্যাশার কথাও জানান।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিধি ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দেন ডিআরইউ'র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি আজমল হোসেন খাদেম ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, আযম মীর শহীদুল আহসান, কাজী আবদুল হান্নান, সৈয়দ আখতার ইউসুফ, অজিত কুমার সরকার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজের দুই অংশের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ও আকতার হোসেন।

সাবেক সভাপতি আজমত হোসেন খাদেম বলেন, সাংবাদিকতার যে মূল বিষয় পেশাদারিত্ব বজায় রেখে ডিআরইউর সদস্যরা কাজ করবেন এটাই প্রত্যাশা। খুব ভালো লাগে এখন পর্যন্ত আমরা যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে গঠনতন্ত্র তৈরি করেছিলাম এখনো এখানকার নেতৃত্ব সেটি ধরে রেখেছে।

DRU2

নিজেকে এখনো রিপোর্টার হিসেবে মনে করেন এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, সবার কাছে দোয়া চাই যেন রিপোর্টার হিসেবে যেন বিদায় নিতে পারি।

প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকদের সঙ্গে অন্যদের যে বিভাজন তার প্রতিবাদে মাত্র তিন দিনে তৈরি হয়েছিল ডিআরইউ। রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকলেও পেশাদারিত্বের প্রশ্নে ঐক্য থাকবে। এতবছরে এসে সে বিভাজন হয়নি দেখে বুক ভরে যায়।

আজীজুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ডিআরইউর দিকে তাকালেই খুশি হই। কারণ তারা সক্ষমতা অর্জন করেছে। এই অল্প সময়ে সক্ষমতা অর্জন করার জন্য ভালো লাগে। ডিআরইউর শুধু তাদের ঐতিহ্য রক্ষা করবে না, আরো উজ্জ্বলতর করবে। আমরা পেছনে আছি।

আরেক সদস্য অজিত কুমার সরকার বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির জন্মের একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। ১৯৯৫ সালের শুরুর দিকে যখন জাতীয় প্রেসক্লাবে সদস্য হতে পারতাম না। প্রেসক্লাবে ঢুকতে পারতাম না। পরে আমরা পেশাদার সাংবাদিকদের একত্র করার জন্য উদ্যোগ নিলাম। শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে শাহরিয়ার শহীদ সবাইকে ডাকলেন। প্রায় দেড়শ সাংবাদিক সেদিন সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম।

এই সাংবাদিক বলেন, এখন তারুণ্যদীপ্ত সংগঠন ডিআরইউ। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রেসারগ্রুপ হিসেবে কাজ করছে সংগঠনটি। আমরা প্রতিষ্ঠাকালীন যারা ছিলাম তাদের সম্মাননা জানানো হচ্ছে এটা আমাদের জন্য গর্বের।

অজিত কুমার বলেন, সাংবাদিকরা অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জড়িত। এটি বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জন্য সচিবদের চেয়েও বেশি বেতনের স্কেল নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি নিজেও ইত্তেফাকের সাংবাদিক ছিলেন।

প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের স্মরণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সৈয়দ আকতার ইউসুফ।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের অনৈক্যের কারণে সাংবাদিকদের শক্তি কমে গেছে৷ তবে এখনো ডিআরইউ ঐক্যবদ্ধ আছে। আশা করি আগামী দিনেও থাকবে।

ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আন্দোলন করার জন্য এখন দেশে আগের মতো সাংবাদিকদের চাকরি হারানোর উৎসব নেই বলে মনে করেন আখতার হোসেন।

এর আগে সকালে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ডিআরইউ'র ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়।

ডিআরইউ চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়। বিকেলে কেক কাটা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সন্মাননা প্রদান করা হয়।

DRU3

ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে এবং উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঈনুল আহসান, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, ডিআরইউ'র সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও ইলিয়াস হোসেন।

এসময় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-অর্থ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন, দফতর সম্পাদক কাওসার আজম, নারী বিষয়ক সম্পাদক মরিয়ম মনি সেঁজুতি, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন, কল্যাণ সম্পাদক মো. তানভীর আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য কিরণ শেখ, মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ও মো. ইব্রাহিম আলী।

সকাল ডিআরইউ প্রাঙ্গণ থেকে কার্যনির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সংগঠনের সদস্য, সাবেক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বের করা র‌্যালি রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এসময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী টি-শার্ট, রঙবেরঙের ব্যানার ফেস্টুন, বাদ্যযন্ত্র ও ঘোড়ার গাড়ি র‌্যালিকে বর্ণাঢ্য রূপ দেয়।

এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ডিআরইউ সদস্য ও পরিবারের জন্য সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সহযোগিতায় দিনব্যাপী চক্ষু সেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। তিন শতাধিক সদস্য ও পরিবারের সদস্যরা এ সেবা নেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ডিআরইউ চত্বর বেলুন দিয়ে সাজানো এবং আলোকসজ্জা করা হয়।

বিইউ/জেবি