images

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় মোখায় পান চাষিদের সর্বনাশ

খলিলুর রহমান, বোরহান উদ্দিন

১৬ মে ২০২৩, ০৫:৪১ পিএম

ঘূর্ণিঝড় মোখায় কক্সবাজার জেলায় প্রায় চার কোটি টাকার পানবরজ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছেন অন্তত এক হাজার ৭০ জন চাষি। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে টেকনাফ উপজেলায়। সেখানে এক হাজার ৩০ জন পান চাষির ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ মে) কক্সবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র ঢাকা মেইলকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, চকরিয়া, মহেশখালী, রামু, উখিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার কুতুবদিয়া বাদে সবগুলো উপজেলায় পান চাষি রয়েছে। এ বছর পুরো জেলায় ৩৫ হাজার পান চাষি রয়েছেন। তারা ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখায় এক হাজার ৭০ জন পান চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টেকনাফ উপজেলায় পান চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই উপজেলায় ১ হাজার ৩০জন পান চাষি ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

তবে কৃষকদের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। কৃষকেরা জানান, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পানের ভালো ফলন হয়। কিছু চাষি কয়েক লাখ টাকার পান বিক্রিও করেন। কিন্তু হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে তছনছ হয়ে গেছে পানের বরজগুলো।

betel-leafটেকনাফ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখায় পানের বরজগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে। কৃষকরা পুনরায় কাজ শুরু করেছেন।

পান চাষিদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সাধারণত একটি পানবরজ আট থেকে ১০ মাস পর্যন্ত টিকে থাকে। প্রতি মাসে দুইবার পান বিক্রি করা হয়।

টেকনাফের রাজারছড়া গ্রামের পান চাষি হাসান আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, এক সিজনের জন্য বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে আমি একটি জমি ভাড়া নিয়ে পান চাষ করেছিলাম। এতে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে এবার পানে ফলন ভালো হয়েছিল। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দাপে পান বিক্রি করেছে। মাসে দুইবার পান বিক্রি করতে পারি। গত মাসে পান বিক্রি করে ১৮ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখায় আমার পানের চাষ সব মাটির সাথে মিশিয়ে দিছে।

এতে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান এই পান চাষি।

betel-leaf

ছোটবেলার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে ওই পান চাষি বলেন, অতীতেও অনেকবার ঘূর্ণিঝড় ও পানি উঠার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। তবে এবার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

একই এলাকার আরেক পান চাষি আবুল কাশেম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি এবার ৬০ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছিলাম। ঘূর্ণিঝড় মোখায় প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতি মাসে ৮০ হাজার টাকার পান বিক্রি করতে পারেন জানিয়ে আবুল কাশেম বলেন, এবারে ঘূর্ণিঝড়ে আমার প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

নুরুল হক নামের আরেক পান চাষি ঢাকা মেইলকে বলেন, এক বিঘা জমিতে আমি পান চাষ করছিলাম। গত মাসে আমি ত্রিশ হাজার টাকার পান বিক্রি করেছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখায় পান গাছগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এতে আমার আড়াই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে পান চাষ করছি। এ বছরের মতো এত বড় ক্ষতি আর কখনো হয়নি। ঋণগ্রস্ত চাষিরা পান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেন। এবার বরজ নষ্ট হওয়ায় চাষিরা ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাবেন বলেও জানান ওই পান চাষি।

betel-leafএ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফের উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার টেকনাফে প্রায় সব ক’টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক পান বরজের ওপর নির্ভরশীল। ধার-দেনা করে তারা পানের চাষ করেন।

তিনি আরও জানান, এই উপজেলায় আবাদ করা প্রায় ৫০ শতাংশ পানবরজ ঘূর্ণিঝড় মোখায় নষ্ট হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি অফিসার আশিস কুমার দে ঢাকা মেইলকে বলেন, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পান চাষে এবার বাম্পার ফলন হয়েছিল। গত কয়েক বছর পানে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার ধানি জমিতেও পানের বরজ করেন চাষিরা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে পান চাষিদের সর্বনাশ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত দিবে তাদের কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

কেআর/বিইউ/এমএইচটি