images

জাতীয়

মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

খলিলুর রহমান, বোরহান উদ্দিন

১৫ মে ২০২৩, ০১:০১ পিএম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত পুরোপুরি না লাগলেও আংশিক আঘাতে অনেকটা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার। তবে মূল কক্সবাজারে তেমন প্রভাব না পড়লেও বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন টেকনাফ, সেন্টমার্টিনের মানুষ। কারণ বেশি তাণ্ডব চলেছে এই এলাকায়।

সরকারি দফতরগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এলাকায় ২০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রোববার (১৪ মে) ঝড়ের পরদিন সোমবার (১৫ মে) থেকে বিধ্বস্ত বাড়িঘর মেরামতে লেগে পড়েছেন মানুষ।

রোববার ঘূর্ণিঝড় হওয়ার পর অনেকে বাসায় ফিরতে পারেননি। বিশেষ করে যাদের বাড়িঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর যাদের আংশিক ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা ঘূর্ণিঝড় থামার পরই এসেছেন। কিন্তু মোখার প্রভাব শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় অনেকে চাইলেও কিছু করতে পারেননি। আবার বিদ্যুৎহীনও হয়ে পড়েছিল অনেক জায়গা।

যে কারণে সোমবার সকাল থেকে শুরু করেছেন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা।

dm

সরেজমিন দেখা গেছে, কেউ ভেঙে যাওয়া গাছ কাটছেন। কেউ আবার ভাঙা ঘরের টিনের চালা, কাঠ ঠিকঠাক করছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেভাবে আশঙ্কা ছিলো সেভাবে ঘূর্ণিঝড় আঁচড়ে পড়লে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে হত তাদের। বিশেষ করে উপকূলের কোল ঘেঁষা কোনো বাড়িঘর থাকত না। কারণ সেন্টমার্টিনে তিনতলা ভবন পর্যন্ত কেঁপে উঠেছে মোখার তাণ্ডব চালানোর সময়।

সাবরাং এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত শহিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড়ের আগে আশ্রয় কেন্দ্রে গেছি। পরে এসে দেখি ঘরের অনেক কিছু ভেঙে গেছে। তাই রাতে সেখানে না থেকে ঘরে এসে সকাল থেকে ঠিক করতেছি।

তবে হঠাৎ করে বিপদ হওয়ায় ঘর মেরামতের টাকা জোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

উখিয়ার বাইলাখালীর হাকিম মিয়া জানান, তার ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাও ঠিক করতে লাখ খানেক টাকা খরচ হবে।

dm

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলাম। এসে দেখি ঘরের চালা উড়ে গেছে। সকাল থেকে টিন কিনে আবার কাজ শুরু করছি।

তবে এক্ষেত্রে সরকার কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের থেকে কোনো ধরণের সহযোগিতা পাননি বলে জানান এই কৃষক।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সেখানকার প্রায় ৮০ ভাগ কাঁচা ও আধাপাকা ঘর ভেঙে পড়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ ঢাকা মেইলকে বলেন, কক্সবাজার জেলার সবকটি উপজেলার ২০ হাজার ৪৬৯টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টেকনাফ উপজেলায়।

আর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ঢাকা মেইলকে বলেন, সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ, উখিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর বেশিভাগ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উখিয়ার মোনখালী এলাকার খলিলুল্লাহ নামের শুটকি ব্যবসায়ীর দাবি, শুটকি অর্ধেকের মতো ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার শুকাতে নিয়ে আসছি। দেখি কতটা টিকে।

dm

এর আগে রোববার (১৪ মে) দুপুরে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এর মূল আঘাতটি মিয়ানমারে হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতি হয় বাংলাদেশের। ফলে ধীরে ধীরে আতঙ্কের ঘূর্ণিঝড় মোখার বিপদ কেটে স্বস্তি ফিরে এখানকার মানুষের মনে।

এদিকে রোববার ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মেরিন ড্রাইভে আশপাশের সব দোকানপাট বন্ধ থাকলেও সোমবার সকাল থেকে সব খোলা দেখা গেছে। আগের মতো লোকজনেরও আনাগোনা দেখা গেছে দোকানগুলোতে।

অন্যদিকে ইনানী বিচ থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত যেসব জায়গায় পর্যটকদের আনাগোনা থাকে সেসব জায়গায় লোকজনের উপস্থিতি চোখে পড়েছে।

এছাড়া প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েকদিন ধরে জেলেরা নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত ছিলেন। অনেকে নৌকাও উপরে তুলে রেখেছিলেন। তবে সোমবার থেকে অনেকে নৌকা নামিয়ে নিয়েছেন। মাছ ধরতে আবার সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে অনেককে।

বিইউ/কেআর/এএস