নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ মে ২০২৩, ০৯:৪৬ এএম
বাংলাদেশ উপকূলে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়। ‘মোখা’ নামের এই ঝড় আঘাত হানতে পারে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি ঘূর্ণন গতি নিয়ে। ফলে উপকূলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির অনুমান করা যাচ্ছে। আসন্ন এই দুর্যোগের আগেই সম্ভাব্য দুর্গতের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ফারাজ করিম চৌধুরী।
ফারাজ চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান। সামাজিক কাজে অন্যদের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন দূর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে এই তরুণকে। ফিলিস্তিলের মুসলিমদের জন্যও বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতা পাঠানোর আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
এবার ঘূর্ণিঝড় যখন বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে, তখন তিনিও ঝড়ের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন। ছুটে গেছেন টেকনাফে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ উপকূলের টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে জোরালো আঘাত করতে পারে মোখা।
সাধারণভাবেই এসব এলাকায় অনেক মানুষের খাদ্য ও সুপেয় পানির প্রয়োজন পরবে। বিষয়টি মাথায় রেখে শনিবারই টেকনাফে পৌঁছেছেন ফারাজ করিম চৌধুরী। সঙ্গে নিয়েছেন বিপুল খাবার। এরমধ্যে অনেক খাবার বিরতণের জন্য প্রস্তুতও করা হয়েছে।
শনিবার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে খাদ্যসামগ্রীর ছবিসহ দেওয়া একটা স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য আমরা আরও কয়েক হাজার খাদ্যসামগ্রী প্যাকেটিং করব। আমাদের এই কাজে স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। যারা এ কাজে যুক্ত হতে চান তারা রোববার (১৪ মে) সকাল ১০টায় এই স্থানে (ইসহাক এন্ড ব্রাদার্স, ভেড়া মার্কেট, নতুন চাক্তাই, চট্টগ্রাম) চলে আসুন। প্রয়োজনে এই নাম্বারে 01859-373148 যোগাযোগ করুন।’
এর আগেও ফারাজ করিমের ডাকে সাড়া দিয়ে শত শত তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সকলে মিলে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের সেবায়।
এরইমধ্যে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক। তাদের বিষয়েও ফেসবুক পেজে লিখেছেন ফারাজ। নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলার মানুষের জন্য আপনি যদি অল্প কিছু করেন, তাহলে পুরো পৃথিবীটা আপনাকে এনে দিতে চাইবে। গতকাল রাতে ঢাকা থেকে টেকনাফ আসার পথে প্রায় ৩টি জায়গায় বিরতি দিয়ে চা, কফি ও পানি খেয়েছি। একটি জায়গায়ও জোর করে কাউকে খাবারের বিল দিতে পারিনি। তাদের কথা হচ্ছে, যেহেতু আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে যাচ্ছি, তারা আমাদের কাছ থেকে পয়সা নেবেন না। আসলে এখানে পয়সাটা বড় বিষয় নয়, মানুষের আন্তরিকতা ও ভালোবাসাটাই বড় বিষয়। বর্তমানে আমি টেকনাফের খুব কাছাকাছি। তবে আমার স্বেচ্ছাসেবী টিম গতকাল গভীর রাতেই সেখানে পৌঁছে গেছে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে, সেখানকার স্থানীয় লোকজন যখন শুনেছে আমরা টেকনাফের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি, তারা সাথে সাথে আমাদের সাথে যোগদান করেছে। আসলে বাংলাদেশের মানুষের দেশের প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। আপনারা সবাই আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য দোয়া করবেন।’
ইচ্ছে থাকলেও সেন্টমার্টিন যেতে পারেননি তিনি। তবে ঝড়ের পর সেখানে যাবেন জানিয়ে ফারাজ আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, ‘কিছুক্ষণ আগে টেকনাফের ইউএনও সাহেব জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে কোনো অবস্থাতেই সেন্টমার্টিন যাওয়া সম্ভব নয়। ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ২/৩ তলা বিশিষ্ট ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের সেখানে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেন্টমার্টিনে কোনো সহযোগিতা করতে চাইলে ঘূর্ণিঝড়ের পর করা যাবে। এই মুহূর্তে সেন্টমার্টিনের সাথে সবকিছুর যোগাযোগ বন্ধ। উপকূলীয় অঞ্চলের সকল বাসিন্দাদের অনুরোধ করছি, আপনারা সবাই দয়া করে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে যান। প্রশাসনের কথা আমাদেরকে শুনতেই হবে। আমি জানি নিজেদের সব সম্পদ ও বাড়ি-ঘর রেখে অনেকেই যেতে চাইবে না। এরপরেও নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য আপনাদের যেতেই হবে। ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত মানে সর্বোচ্চ বিপদ।’
কারই/এএস