জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৯ মে ২০২৩, ০৯:০৪ পিএম
কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ও গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টারে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দোকান বরাদ্দ দিয়ে এই টাকা তিনি হাতিয়ে নেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন এক ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই ব্যবসায়ী।
মঙ্গলবার (৯ মে) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে মো. কামাল হোসেন রিপন নামে এক ব্যবসায়ী সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন। এ সময় বঙ্গবাজারের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে এমপি আফজাল হোসেনের একাধিক নাম্বারে ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন রিপন বলেন, ‘গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স আলাদা দুটি মার্কেট হলেও কমিটি একটি। ডিএসসিসির মালিকানাধীন ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেট করার উদ্যোগ নেওয়া হলে মার্কেট কমিটির তখনকার সাধারণ সম্পাদক এমপি আফজাল হোসেন ও সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কমপ্লেক্সটি যেনতেনভাবে নির্মাণ করে দোকান বরাদ্দ দেওয়া শুরু করেন। তখন মার্কেটের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা, লিফট ও সিঁড়ির জায়গায় অবৈধভাবে ৫২৫টি দোকান করে প্রতি দোকান থেকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করে মোট শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে পেরে না উঠায় ২০১২ সালে আমি (রিপন) হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করি। যা আমলে নিয়ে আদালত রুল জারি করে নিষেধাজ্ঞা দেন। আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের হকার বানিয়ে চারটি দোকান বরাদ্দ নিয়েছিলেন এমপি আফজাল নিজেও। পরে কমিটির এ ধরনের অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে ডিএসসিসি ও তৎকালীন যুগ্ম শ্রম পরিচালককে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি।’
এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমি ২০১৩ সালে সংবাদ সম্মেলন করায় আমাকে জীবননাশের হুমকি দেন এমপি আফজাল। বিভিন্ন সময় দেওয়া হুমকির ভিত্তিতে আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে তিনটি মামলা দায়ের করি। ওই মামলাগুলোতে মুচলেকা দিলেও থেমে থাকেনি হুমকি। পরে নিরুপায় হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দিই।’
কামাল হোসেন রিপন বলেন, ‘বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারসহ মোট ছয়টি মার্কেট এমপি আফজালের দখলে। শুধু ঢাকা ট্রেড সেন্টার নয়, বঙ্গবাজারের বিভিন্ন খালি জায়গায় অবৈধভাবে চার শতাধিক দোকান বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। সবশেষ বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া ২-৩ কোটি টাকার মালামাল কোনো টেন্ডার ছাড়াই মাত্র ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এর প্রতিবাদ করায় গণমাধ্যমের সামনেই আমাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় প্রায় একমাস হতে গেলেও এখনো মামলা নেয়নি পুলিশ।’
ব্যবসায়ী রিপন বলেন, ‘বঙ্গবাজারের নিচতলায় ২০০৯ নম্বর দোকান আমার মৃত মা জরিনা বেগমের নামে বরাদ্দকৃত। এছাড়াও দ্বিতীয় তলায় তিনটি দোকান ভাড়া নেওয়া। এমপি আফজাল ও জহির মিয়া আমাদের দোকানের ভেতর আরেকটি দোকান বসিয়ে ৮৬ লাখ টাকা বিক্রি করেন। পরে এই বিষয়ে মামলা দায়ের করি আদালতে। ওই মামলা চলমান রয়েছে। এভাবে দোকান বরাদ্দ দিতেই বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ভেঙে ১০ তলা নতুন ভবন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে বাড়তি প্রায় দুই হাজার দোকান ঘিরে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন এমপি আফজাল। যা ব্যবসায়ীরা বুঝতে পেরে আদালতে রিট করেন। পরে আদালতের স্থগিতাদেশে বঙ্গবাজার ভাঙা সম্ভব হয়নি। এজন্যই পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবাজারে আগুন লাগিয়েছে এমপি আফজাল ও তার শুভাকাঙ্ক্ষী মহল।’
এমআইকে/জেবি