দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
০৫ মে ২০২৩, ১০:০১ পিএম
পুরান ঢাকা। নামটি শুনলেই মনের কোণে উঁকি দেয় মজার সব খাবার। নানা কারণে স্থানটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসে। মুখরোচক খাবারে ভিড়ে স্থানটিতে অনেকেই ভিড় করেন মিষ্টির খোঁজেও। এরমধ্যে লোভনীয়, মজাদার এবং সুস্বাদু খাবারের তালিকায় থাকা জাফরানের মিষ্টির খ্যাতি ছড়িয়েছে।
জাফরানের মিষ্টি নিয়ে প্রচলিত আছে, ‘খাইলেই চাটবেন, না খাইলে পস্তাইবেন।’ জনপ্রিয় এ মিষ্টিটি পাওয়া যায়, এমন দোকানগুলোতে গিয়ে তারই প্রমাণ মিলে। নাজিরা বাজারসহ পুরান ঢাকার বেশকিছু দোকানে মিলে এ মুখরোচক খাবারটি।
জাফরানের মিষ্টির জনপ্রিয়তার শীর্ষে মদিনা মিষ্টান্ন ভান্ডার। যদি প্রথম বারের মতো জাফরানের মিষ্টির স্বাদ নিতে চান, তাহলে আপনাকে ছুটে আসতে হবে লালবাগে। দোকানটির অবস্থান লালবাগ কেল্লার কাছেই রহমতুল্লাহ বয়েজ হাইস্কুলের ঠিক সামনে।
দোকানটিতে ভিড় জমানো ক্রেতাদের ভাষ্যমতে, জাফরান মিষ্টির স্বাদ অন্য যেকোনো মিষ্টির তুলনায় অতুলনীয়। স্বাদে কেউ কেউ কুমিল্লার রসমালাইয়ে সাথেও তুলনা করেন। কারও কারও মতে, জাফরান মিষ্টি রসমালাইয়ের উন্নত সংস্করণ।
রসমালাইয়ের উপাদানের সাথে জাফরানের মিষ্টি তৈরির উপাদানে রয়েছে বেশ মিল। এতে প্রয়োজন হয় ছানা, চিনি, ময়দা, বেকিং পাউডার এবং পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ। প্রতি পিস জাফরান মিষ্টির মূল্য ৭৫টাকা।
দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়লেও, আয়তনে খুব একটা বাড়েনি দোকানটি। মদিনা মিষ্টান্ন ভান্ডার বলা হলেও এখানে মিলে গরম গরম লুচির সাথে সবজি ভাজি। আরও রয়েছে বুন্দিয়াসহ ঝাল-মিষ্টি খাবারের সমারোহ। সকাল আর সন্ধ্যায় ভিড় বেশি থাকে। ক্রেতাদের বসতে দেওয়া হয় স্টিলের বেঞ্চ। টি-টেবিল দিয়ে বৈঠক খানার আদলে সাজানো ছোট্ট খাবারের জায়গা। স্বল্প জায়গায় কারণে বসে খেতে চাইলে অপেক্ষা করতে হয়। কারও খাওয়া শেষ হলেই বসার সুযোগ পায় অন্যরা। তবে দোকানটিতে মাংস জাতীয় কোনো খাবারই পাওয়া যায় না।
সপ্তাহের প্রতিদিনই ভোর থেকে শুরু হয় বেচা বিক্রি। খাবার তৈরির প্রস্তুতি চলে মধ্যে রাত থেকে। রাত ১১টার পরে দোকান বন্ধ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানুষের মুখে মুখে দোকানটির খাবারের খ্যাতি রয়েছে। হোটেলটি প্রতিষ্ঠা করেন ওয়াজিদ আহম্মেদ। তিনি এখন দোকানে খুব একটা বসেন না।
তার দেখা মিলে অদূরের একটি মুদি দোকানে। আকারে বেশ বড় দোকান, যেটিকে ছোটখাটো সুপার স্টোরও বলা যেতে পারে। এটিও মূলত তার দোকান। আলাপকালে জানান, শুরুর দিকে মিষ্টি বিক্রি করতেনে না তিনি। বিক্রি করতেন নানা সবজির মিশ্রণে ভাজি। প্রতিদিন সকালে লুচির সাথে পাওয়া যেত মুখরোচক এ ভাজি। এ ভাজির স্বাদই পরিচিত করিয়েছে সকলের কাছে।
মদিনা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী লালবাগের বাসিন্দা ওয়াজিদ আহম্মেদ বলেন, ১৯৭৬ সালে পরিবারের অমতেই ব্যবসা শুরু করেন। তখন তিনি মেট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষার্থী। মাথায় আসলো ব্যবসা করব। তখন দোকানটি অন্য একজনের ছিল। তিনি ব্যবসায় লাভ করতে না পেরে বিক্রি করে দেন। বন্ধুদের থেকে ধার করে নিজের রেডিওসহ প্রিয় জিনিস বিক্রি করে দোকানটি নিলাম, এইতো। এরপর কেটে গেছে ৪৭ বছর। দোকান সাজাতে লেগেছিল ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে মদিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে কাজ করেন প্রায় অর্ধশত কর্মী।
মদিনা মিষ্টান্ন ভান্ডারে আরও পাওয়া যায় ভাজা মালাই, শাহী কাশ্মীরি হালুয়া, মালাই দিয়ে চপের আকারে বানানো দুধে ভেজানো মালাই চপ, ঘন দুধের রসে জাফরান ভিজিয়ে বানানো ছানার মিষ্টি জাফরান ভোগ, সর আর বাদামের মিশ্রণে বানানো বাদাম সর, দইয়ের উপর জাফরান দিয়ে সাজানো জাফরান দই, কাজুবাদাম কুচি সহ বাদাম দই, গুড়ের রসগোল্লাসহ বাহারি মিষ্টি। এছাড়াও রয়েছে জাফরান ভোগ, মালাই চপ, বাদাম সর। রয়েছে কাশ্মীরী হালুয়া, মালাই চপ, সর মালাই, জাফরান ভোগসহ গরুর দুধের চা।
ডিএইচডি/এমএইচটি