নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩১ এএম
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন চিকিৎসক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে বাঁশ দিয়েই তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশ হাসপাতাল। দেশের স্বাস্থ্যসেবায় মুক্তিযোদ্ধার অবদান চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে। দেশের মানুষের জন্য সবসময় সর্বোচ্চ দিয়ে করেছেন তিনি। দেশের ওষুধ নীতি প্রণয়নে তিনি রেখেছিলেন অনন্য ভূমিকা।
ওষুধ নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় পিজি হাসপাতালের (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) পরিচালক অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামকে। এই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এ বিষয়ে একটি বেসরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরি বলেছিলেন, ‘ষাটের দশকে আমি বিলেতে ভাস্কুলার সার্জন হিসেবে কাজ করতাম। ওই সময় আমরা একটা খবর জেনে খুব হতাশ হয়ে পড়ি। যুক্তরাষ্ট্রের টেরামাইসিন নামের যে ওষুধ বাজারে চলত, তা তৈরি হতো পূর্ব ইউরোপের একটি সমাজতান্ত্রিক দেশে। পশুর ওষুধ এবং টেরামাইসিন একই কারখানায় তৈরি হতো।’
ওষুধ নীতি নিয়ে নিজের কাজের অভিজ্ঞতার তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতারণার আরেকটি বিষয় চোখে পড়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। আমি তখন গ্রামে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। দেখতাম এক দিনের চিকিৎসার জন্য যারা ঢাকায় আসতেন, তাদের সাত দিনের উপার্জন শেষ হতো। যক্ষ্মার ওষুধ ব্রিটেনে দাম ছিল ৬ ডলার। সেই ওষুধের দাম বাংলাদেশে ৪৯ ডলার। বিচিত্রায় ওষুধ সাম্রাজ্যবাদ নামে আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। বাংলাদেশের ওষুধের সার্বিক পরিস্থিতি আমি শেখ সাহেবকে বুঝিয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম, দেশে ওষুধের দাম কমাতে হলে প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে। তিনি পূর্ব ইউরোপ থেকে ওষুধ আমদানির ব্যবস্থা করেছিলেন। ওষুধ নিয়ে কাজ করা আমার অনেকটা নেশার মতো।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নাম দুইটি একে অপরের পরিপূরক। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে জফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান আলোচনায়ও সবার আগে আসে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাম। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র বাংলাদেশের একটি অতি সুপরিচিত স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সাহায্য সংস্থা, যেটির কর্মসূচির ভিত্তি স্বাস্থ্য সেবার উপর নির্ভরশীল। স্বাধীন বাংলাদেশেও প্রতিষ্ঠানটি প্রথম স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটি তার সমন্বিত সমাজস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা বা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অবদান রাখায় দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদক লাভ করে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি জনহিতকর ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টের প্রধান দুটি লক্ষ্য হচ্ছে, দরিদ্র মানুষের উন্নতি হলে দেশের উন্নতি হবে এবং মেয়েদের অগ্রগতি হলে দেশের অগ্রগতি হবে। বর্তমানে সারাদেশে গণস্বাস্থ্যের ৪০টি মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। এগুলো সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কতৃক প্রশংসিতও হয়েছে। এর অধিনে রয়েছে ৭টি হাসপাতাল, ডেন্টাল কলেজ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশনস, মাসিক গণস্বাস্থ্য ম্যাগাজিন, বেসিক কেমিক্যাল কারখানা (দেশের সবচেয়ে বড় প্যারাসিটামল কাঁচামাল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান) গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যান্টিবায়োটিকের কাঁচামালের ফ্যাক্টরি। এছাড়াও সারাদেশে ৪৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মেয়েদের ড্রাইভিং স্কুল, ভেটেরিনারি ফার্ম, রোহিঙ্গাদের জন্য ১৫টা মেডিকেল ক্যাম্প, এগ্রিকালচারাল ফার্ম, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ফার্ম রয়েছে।
একে