images

জাতীয়

মেট্রোরেলে হঠাৎ সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের উদ্যোগ, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন

০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৬ এএম

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ নিরাপদ বা নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে। দৈনন্দিন সবক্ষেত্রেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সৌরশক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে সবাই। এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রেলও চলছে সৌরশক্তিতে।

এবার বাংলাদেশের একমাত্র মেট্রোরেলও (এমআরটি-৬, উত্তরা থেকে কমলাপুর) সৌরশক্তিতে চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মেট্রোরেলে এই নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সৌরশক্তি যুক্ত হচ্ছে। শুরুতে এটি পরিকল্পনায় ছিল না। ফলে মেট্রোরেলের স্টেশনসহ ডিপোতে সোলার প্যানেল বসানোর উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়নি। এখন মেট্রোর স্টেশনের উপরিভাগ ভেঙ্গে সোলার প্যানেল বসাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে একদিকে অর্থের যেমন অপচয় হবে, তেমনই নষ্ট হবে সৌন্দর্য। অন্যদিকে এরইমধ্যে নির্মাণকাজ উদ্বোধন হওয়া পাতাল মেট্রোরেলেও (এমআরটি-১) যুক্ত করা হয়নি সৌরশক্তির দিকটি।

Specialএরই মধ্যে মেট্রোরেলের (এমআরটি-৬) উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের ৯টি স্টেশনের সবগুলো চালু হয়েছে। আগামী জুলাইয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হবে। তবে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হবে ডিসেম্বরে।

মেট্রোরেল সৌরবিদ্যুতে চালানোর বিষয়ে তড়িৎ কৌশল ও নবায়নযোগ্য শক্তি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী হাসান মাদমুদ খান ঢাকা মেইলকে বলেন, মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর যে কাঠামো তাতে সোলার প্যানেল বসানো যাবে না। কারণ মেট্রো স্টেশনের ছাদে বা টিনের ওপর সোলার প্যানেল বসাতে হবে। স্টেশনের ছাদ গোলাকৃতির। স্টেশনে সোলার প্যানেল বসাতে হলে উপযোগী করে ছাদ নির্মাণ করতে হবে।

তিনি বলেন, সোলার প্যানেল বসানো ক্ষেত্রে দুটি টেকনোলজিক্যাল দিক রয়েছে। একটাকে আমরা বলি অনগ্রিড, আরেকটা অফগ্রিড বা ব্যাকআপ পাওয়ার সিস্টেম। অনগ্রিডে কোনো ব্যাটারি থাকে না। এক্ষেত্রে সূর্য যতক্ষণ আছে ততক্ষণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। যা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও হাইব্রিড পদ্ধতিও রয়েছে। তবে অনগ্রিড পদ্ধতিই মেট্রোরেলের জন্য যথার্থ। অন্যথায় খরচ অনেক বেড়ে যাবে।

Specialপ্রকৌশলী হাসান মাদমুদ খান বলেন, মেট্রো স্টেশনে যে পরিমাণ জায়গা রয়েছে তা দিয়ে সোলার প্যানেল বসিয়ে পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যাবে না বলেই মনে হয়। তবে ডিপোকেন্দ্রিক পরিকল্পনা করা যেতে পারে। মেট্রোরেলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন তা উৎপাদন না করতে পারলেও অর্ধেক বা তার কম উৎপাদন করা যাবে।

সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে তিনি আরও বলেন, একটা সোলার প্যানেলের ওয়ারেন্টি থাকে ২০ বছর। যা ২৫ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ একবার স্থাপন করার পর পরবর্তী ২৫ বছর আর এর দাম বাড়ছে না। ফলে মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে সৌরশক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম ১০-১৫ শতাংশ কম পড়বে। যদিও আরও কিছু বিষয়ের উপর এ দর উঠানামা করে।

Specialইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা মেইলকে বলেন, মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্পে সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো কতটা সম্ভব তা বলা কঠিন। হয়তো চাহিদার তুলনায় সামান্য বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারবে। যদিও এ প্রকল্পে শুরু থেকে সৌরশক্তির বিষয়টিকে যুক্ত করা হয়নি। হঠাৎ কোনো কিছু মনে হলো আর যুক্ত করব, বললেই হবে না। এর জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন। মেট্রোরেলের জন্য সৌরশক্তি কতটা উপযোগী তা আগে স্টাডি করে দেখতে হবে। যেন করার জন্য করা না হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। প্রকল্প যখন পরিকল্পনা করা হয় তখনই এটি যুক্ত করা প্রয়োজন। যদিও যেকোনো প্রকল্পে পরেও সোলার প্যানেল যুক্ত করা যায়। তবে মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে যেহেতু দেশি-বিদেশি কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়, সেখানে পরিকল্পনায় সোলার প্যানেল না রাখাটা বিস্ময়কর ব্যাপার। মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর লেবেল প্রায় দুই বা তিন তলা পর্যন্ত। এ হাইটে দুই পাশে যদি ভবন থাকে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাবে কিনা প্রশ্ন থেকে যায়।

Specialমেট্রোরেলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে শুধুমাত্র বিদ্যুতের ব্যবহার কমবে তা নয়, এর মধ্যে দিয়ে একটি বার্তা দিতে হবে যে আমাদের আস্তে আস্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে আমরা শিক্ষা পেয়েছি- যেসব জ্বালানি আমদানি করে আমাদের আনতে হয় সেগুলো একসময় শেষ হয়ে যাবে। যা আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। এর জন্য আমাদের নিজস্ব উৎসগুলো খুঁজে বের করতে পারলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, তেমনি পরিবেশ সংরক্ষিত থাকবে।

এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫): সাউদার্ন রুট প্রকল্প পরিচালক আব্দুল ওহাব ঢাকা মেইলকে বলেন, উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে বাংলাদেশের পূর্ব-পশ্চিম মেট্রোরেল তথা এমআরটি-৫ নির্মাণ করা হবে। এখন পর্যন্ত এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি তথা সৌরশক্তির দিকটি যুক্ত করা হয়নি। পাতাল অংশে সুযোগ নেই। তবে উড়াল অংশে হয়তো পরবর্তীতে যুক্ত হলেও হতে পারে।

Specialঅন্যদিকে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) প্রকল্প পরিচালক আবুল কাসেম ভূঁঞা ঢাকা মেইলকে বলেন, এমআরটি লাইন-১ বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল। বিমানবন্দর-কমলাপুর এবং পূর্বাচল-নতুন বাজার-রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ রুটের মধ্যে ৩১.২৪১ কিলোমিটার বিশিষ্ট পাতাল ও উড়াল এই মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে।

এতে সৌরশক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনায় নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি যেহেতু পাতাল রেল, সৌরশক্তি ব্যবহারের সুযোগ নেই। মাটির নিচ দিয়ে যাওয়ায় সূর্যের আলো পাওয়া যাবে না। উড়াল অংশের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এখনও পরিকল্পনায় সংযুক্ত করা হয়নি।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক ঢাকা মেইলকে বলেন, মেট্রোরেলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি তথা সৌরশক্তি যুক্ত করার জন্য অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছেন। যারা সৌরশক্তিতে সহায়তা করবেন তা নিয়ে সরকারের একটা প্রকল্প রয়েছে। এরইমধ্যে আমরা তাদের সাথেও মিটিং করেছি। একটা গ্রুপ এসেছে, যারা মেট্রোরেলে সৌরশক্তি সংযুক্তিতে বিনিয়োগ করবে। মেট্রোরেলের প্রয়োজনের মিটিয়ে যেটুকু থাকবে তা আমরা জাতীয় গ্রিডে দেব। আমাদের কাছে আরও একটি প্রস্তাব এসেছে। তাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত রেটে কিনে নেবে। যা অতিরিক্ত থাকবে তা সংক্রিয়ভাবে জাতীয় গ্রিডে চলে যাবে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিটি স্টেশন ও ডিপো যুক্ত করা হবে। শিগগিরই দেখা যাবে আমরা এ পর্যায়ে (মেট্রোরেলে সৌরশক্তি) চলে এসেছি।

ডিএইচডি/জেএম