images

জাতীয়

রাত পোহালেই পদ্মা সেতুতে চলবে ট্রেন, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৩ পিএম

প্রায় আট মাস আগে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে এবার চলবে ট্রেন। ট্রেন লাইনের সব কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙা-মাওয়া পরীক্ষামূলক রেল চলবে। এতে পদ্মার দুই পারজুড়ে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস। ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পারাপার করা যাবে সেটা ভেবে এই অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে বিরাজ করছে খুশির আমেজ।  

পদ্মা সেতুতে আগামীকাল পরীক্ষামূলক ট্রেন চললেও ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সরাসরি যাত্রী নিয়ে রেলপথে ট্রেন চলবে সেপ্টেম্বরে। আর আগামী বছর ট্রেন চলবে ঢাকা-যশোর রেলপথে।

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহম্মেদ সোমবার (৩ এপ্রিল) জানান, গ্যাংকার দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত সাড়ে ৪১ কিলোমিটার রেলপথ পরীক্ষা করে দেখব। এই পথে ডিজাইন-স্প্রিড ১২০ কিলোমিটার থাকলেও ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে টেস্ট-রান চালানো হবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাংকার ট্রেনটি ভাঙ্গা থেকে রওনা হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাওয়া আসবে। ট্রেনটি মূলত নির্মিত রেলপথ ইন্সপেকশনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এই ট্রেনে ভ্রমণ করে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নির্মিত রেলপথসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ পরিদর্শন করবেন। পুরোপুরি চালু হওয়ার আগে এ রেলপথ দিয়ে আমরা প্রকল্পের বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করব।

আফজাল হোসেন জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। অন্যদিকে প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনে  ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে।

এদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পুরনো রেল স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক ট্র্যাককারটি রওনা হওয়ার কথা রয়েছে দুপুর ১২টায়। আর এটি পদ্মা সেতু অতিক্রিম করে দুপুর ২টায় মাওয়া স্টেশনে এসে পৌঁছাবে। এই ট্রেনে থাকবেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনই প্রথমবারের মতো সেতু অতিক্রম করছে। তবে ২৯ মার্চ সেতুর ২৫ নম্বর খুঁটির কাছে বাকি থাকা সাত মিটার রেলপথ নির্মাণ শেষ হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পরও রেল ট্র্যাক মহড়া হিসেবে সেতুতে চলাচল করেছে বলে জানা গেছে।

সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উদ্দেশে আধুনিক একটি ইঞ্চিন সাতটি বগি নিয়ে ছেড়ে গিয়েছে ‘পদ্মা ট্রায়েল স্পেশাল ট্রেন’। এর আগে সৈয়দপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি রাজবাড়ী রেল স্টেশন প্লাটফর্মে এসে পৌঁছে।

ভাঙ্গা টু মাওয়া ভায়া পদ্মা সেতু রুটের ট্রায়াল ট্রেনটি একনজর দেখতে রাজবাড়ী রেল স্টেশন প্লাটফর্মে ভিড় করে উৎসুক জনতা। ট্রেনে চড়ে অল্প সময়ে ঢাকায় যাওয়া যাবে সেটা ভেবে তারা বেশ খুশি।

ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন দিয়ে যশোরের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দেবে। চীন সরকার মনোনীত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড চায়না জিটুজি সিস্টেমের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পরদিন থেকে সেতুটি যানচলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। শুরুর দিন থেকে পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল করবে বলা হলেও তা প্রায় এক বছর পিছিয়ে যায়।

জেবি