দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৩০ এএম
রাজধানীর আইডিয়াল কলেজের সামনের সড়কটিকে সবাই ‘সেন্ট্রাল রোড’ হিসেবে চেনে। একাধিক রিকশাচালকসহ স্থানীয়দের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা সবাই এই নামেই চেনে সড়কটিকে। অথচ বেশ কয়েক বছর আগেই সড়কটির নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী সড়ক’ করা হয়েছে।
‘শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী সড়ক’ নামে প্রায় কেউই চেনেন না সড়কটিকে। এমনকি আশপাশের বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে মার্কেট কিংবা দোকানের কোথাও নতুন নামটি ব্যবহার করতেও দেখা যায়নি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রিকশাচালক থেকে শুরু করে স্থানীয়রাও সড়কটি পুরনো নামেই চেনেন। বাসাবাড়ির নামফলকসহ প্রতিটি পোস্টার কিংবা সাইন বোর্ডে, দোকান, স্কুল-কলেজের ঠিকানায় আগের নামই (সেন্ট্রাল রোড) লেখা। অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের কাছে সড়কটির অস্তিত্বই নেই।
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন মুনীর চৌধুরী। তার সম্পর্কে কতটা জানেন- এমন প্রশ্ন ছিল এলাকার অন্তত দশজন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের কাছে। এরমধ্যে চারজন আংশিক পরিচয় দিতে পারলেও ছয়জন কিছুই বলতে পারেননি।
আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী জুলফিকার নাইম বলেন, আমার জানা মতে সড়কটির নাম সেন্ট্রাল রোড। আমাদের ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক এটি। নাম পরিবর্তন হলে হয়তো সম্প্রতি হয়েছে, নয়তো জানার কথা আমার।
স্থানীয় দোকানি মুকুল ঢাকা মেইলকে বলেন, নাম পরিবর্তন হওয়ার খবর জানা নেই। তবে সারা বাংলাদেশের মানুষই এক নামে সড়কটি চেনে। নাম পরিবর্তন করলে আরও সমস্যা বাড়ে বলেও মত তার।
কি সমস্যা বাড়ে- এমন প্রশ্নের উত্তরে এ দোকানি বলেন, যত সমস্যায় তো আমরাই পড়ি। নতুন নাম লিখলে মানুষ চিনবে না। বিভ্রান্ত হবে। যদিও তার ভাষ্য, বিষয়টি নিয়ে কেউ বাধা দেয়নি বা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো নোটিশও আসেনি তার কাছে।
পরিবর্তিত নামে (শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী সড়ক) সড়কটির পরিচিতি না পাওয়ার বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, নামফলকের মাধ্যমেই নতুন সড়কের নামকরণ করা হয়। এর বাইরে সিটি করপোরেশনের অনেকগুলো কাজ থাকে। দোকানসহ বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও সড়কের নামটি পরিবর্তন হয়েছে কিনা তদারকি করতে পারে। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রেও নতুন নাম যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। পরিচিতি বাড়াতে প্রচারণার বিষয়টিতে জোর দেওয়ার তাগিদ তার।
শহীদ মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন
পুরো নাম আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। তিনি ছিলেন একধারে একজন শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, বাগ্মী এবং বুদ্ধিজীবী। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাতে শহীদ হন। তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে তার জন্ম। তার পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীর চাটখিল থানার গোপাইরবাগ গ্রামে।
মুনীর চৌধুরী ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল (বর্তমান ঢাকা কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯৪৩ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে আইএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স (১৯৪৬) এবং মাস্টার্স (১৯৪৭) পাস করেন, উভয় ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় শ্রেণি পান।
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রথম যে ছাত্রসভা হয়, তাতে তিনি বক্তৃতা করেন। মুনীর চৌধুরী ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান সরকারের হাতে বন্দি হন। বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি তার বিখ্যাত নাটক ‘কবর’ রচনা করেন (১৯৫৩)।
ডিএইচডি/জেএম