কাজী রফিক
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৩২ এএম
যে ভাষায় এই প্রতিবেদনটি লেখা, সেই বাংলা ভাষার গোড়াপত্তন হয়েছিল আনুমানিক ১৩শ বছর আগে। তবে বাংলা ভাষা বিশ্বের কাছে বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছিল ১৯৫২ সালে। ৭১ বছর আগের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল বাংলা মায়ের দামাল ছেলের দল।
সেদিন পাকিস্তানি কর্তাদের নির্দেশে বাংলা ভাষার দাবিতে মিছিলকারীদের উপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তান পুলিশ। ভাষার দাবিতে মিছিলে অংশ নেওয়া সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউল, সালাউদ্দিনসহ অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ দেন। তাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আছে আজকের বাংলা ভাষা। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলেন।
যাদের অবদানে আজ বাংলা ভাষা সগর্বে বিশ্ববাসীর মুখে মুখে, সেই মহান শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে কখনও পিছপা হয় না বাঙালি। তাই তো মহান এই শহীদদের সমাধিকেও সযত্নে রাখা হয়েছে।
রাজধানীর আজিমপুর গোরস্থানে শায়িত আছেন মহান ভাষা শহীদ আবুল বরকত। ১৯৫২ সালে তিনি ২৫ বছরের টগবগে যুবক। পাকিস্তান সরকার যখন ঘোষণা করল, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। তখন তার ঘরে থাকতে পারেননি এমএ ক্লাসের ছাত্র আবুল বরকত। ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার ঘোষিত কারফিউ ভেঙে মিছিল নিয়ে বের হন। একই মিছিলে ছিলেন আব্দুর জব্বার।
সেই মিছিলে গুলি চালায় পাকিস্তানি পুলিশ। শহীদ হন তারা৷ তাদের দুজনকে সমাহিত করা হয় আজিমপুর গোরস্থানে।
বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই মহান দুই শহীদের সমাধির তত্ত্বাবধায়ক। কালো রঙের টাইলস দিয়ে বাঁধাই করা হয়েছে কবর দুটি। কবরের উপরে লেখা রয়েছে মহান দুই শহীদের পরিচয়।
কবর দুটি যে মহান দুই ভাষা শহীদের- সে বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই জানেন আজিমপুর গোরস্থানের গোরখোদকরা। কবরস্থানটি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা গোরখোদক মো. রিফাত ঢাকা মেইলকে জানান, তিনি ভাষা শহীদদের সম্পর্কে খুব ভালো জানেন না। তবে এটুকু জানেন, এই কবর দুটি দুজন মহান মানুষের। তারা বাংলা ভাষার জন্য তাদের জীবন দিয়েছেন।
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে রিফাত বলেন, পশ্চিম পাশের এই কালো কবর ভাষা শহীদদের। এইটা আমরা সবাই জানি। কেউ আসুক না আসুক, তাদের কবর আমরা সারা বছর পরিষ্কার রাখি, দেখাশোনা করি। এটা তো আমাদের দায়িত্ব।
এই প্রতিবেদকের কাছে দুই ভাষা শহীদদের সম্পর্কে জানতে চান রিফাত৷ তাদের পরিচয় ও অবদান শুনে যেন আবুল বরকত ও আব্দুর জব্বারের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল তার। অন্য গোরখোদকদেরও এই দুই শহীদের পরিচয় সম্পর্কে জানাতে শুরু করেন তিনি।
এদিকে কবর দুটির তত্ত্ববধায়ক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ বিভাগে কথা বলে জানা গেছে, কবর দুটিকে রক্ষণাবেক্ষণ এবং পূর্ণ মর্যাদায় রাখতে সারা বছরই কাজ করে নগর কর্তৃপক্ষ। ভাষার মাসে সে তৎপরতা আরো বেড়ে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন কর্মকর্তার আকন্দ ফয়সাল উদ্দীন ঢাকা মেইলকে বলেন, কবর ধোয়ামোছা, পরিষ্কার করা সবকিছুই নিয়মিত করা হয়।
কারই/জেএম