images

জাতীয়

হকার আর রাজনৈতিক পোস্টারে ঢাকা আমতলার ইতিহাস

মাহফুজ উল্লাহ হিমু

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:৫৫ এএম

স্বাধীন বাংলাদেশ আর ভাষা আন্দোলন একইসূত্রে গাঁথা। বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারির হাত ধরেই একাত্তর। আর ২১ ফেব্রুয়ারির সূতিকাগার আমতলা। ঐতিহাসিক আমতলাতেই এক বৈঠকে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্ররা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ যে মিছিল বের হয়েছিল, তারও সূচনা এখান থেকে। আমতলা তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, যা আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অংশ।

সময়ের পরিক্রমায় আম গাছটি না থাকলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসক ফটকটি। তবে অযত্ন-অবহেলায় ম্লান হচ্ছে এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য। হকারদের হাক-ডাক, পণ্য কেনাবেচা এবং বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক পোস্টারে আমতলা প্রাঙ্গণের অস্তিত্বই হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের স্থানটি সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তা শুধু ভাষা আন্দোলন পরিষদের ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত আমতলার ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণ থেকে...’ শিরোনামে একটি ফলকেই সীমাবদ্ধ।

 

Amtola2

সরেজমিনে ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণটিতে দেখা যায়, দেয়ালে আবদ্ধ আমতলা প্রাঙ্গণের গেট দুই পাশে বন্ধ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশের গেট তালাবদ্ধ থাকলেও মূল সড়কের উপর থাকা গেটটি একটি দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে। কয়েকজন ব্যক্তিকে ভেতরে আসা যাওয়া করতেও দেখা গেল। ভেতরের খালি স্থানে চাদরে ঢাকা একটি অব্যবহৃত গাড়ি, সোফা, ভাঙা চেয়ার এবং দুইটি পুরাতন পানির জার পড়ে রয়েছে। সড়কের পাশের গেটে কোনো পোস্টার না থাকলেও অপর গেটটি রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সংগঠনের পোস্টারে ঢাকা পড়েছে।

পোস্টার না থাকলেও বাইরের গেটটি খাবার দোকান ও হকারদের দখলে। গেটের সামনের অল্প স্থান ছেড়ে পুরোটা জুড়েই চলছে কেনা-বেচা। খাবারের পাশাপাশি হাসপাতালের রোগীদের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র ক্রয়-বিক্রয় চলছে। হাড়ি-পাতিল, থালা-গ্লাস, প্লাস্টিকের বালতি, মগ, টুল, চেয়ার, বালিশ-চাদর-মাদুর-মশারি, জুতা, প্রসাধনী দ্রব্য, ফল, পান-সিগারেট, চা, ফিরনি, স্যুপ, ঝালমুড়ি, ভাতের হোটেল। সবই আছে সেখানে। এতসবের ভিড়ে গেটের দিকে তাকানোর মতো সময়ই কারো নেই। অথবা তাকালেও ফলকে কি লেখা বা এখানে স্থাপনাটিই বা কিসের তা ভাববার সময়-সুযোগ কোনোটাই কারো নেই।

Amtola3

তবে এরই মাঝে একজনকে গেট থেকে রঙের কৌটা হাতে বের হতে দেখা যায়। এরপর গেট আর পাশের লোহার রেলিংয়ে রঙ করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমতলা। এখান থেকেই ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিল শুরু হয়েছিল। সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি, সেই উপলক্ষে রঙ করা হচ্ছে।’

এদিকে অমর ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সারা দেশে বিভিন্ন আয়োজন থাকলেও ওইদিনের মূল ঘটনা যেই স্থানকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল সেখানে নেই কোনো আয়োজন। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের গেটে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্যদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, এখানে কোনো আয়োজন নেই। দুই নম্বর গেটের (শহীদ মিনার) সামনে সব আয়োজন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ঐতিহাসিক স্থানটিকে সংরক্ষণে আমাদের পক্ষ থেকে যতটা করার তা করা হয়েছে। স্থানটিতে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। দেয়ালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী রঙ করা হয়। এছাড়া আর কোনো কিছু আমাদের হাতে নেই। তবুও যদি সরকারের পক্ষ থেকে কখনও কিছু করার জন্য বলা হয় সেটা আমরা করি। যেমন এবার একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে গেট ও দেয়ালে রঙ করা হচ্ছে।

Amtola4

২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমতলা কেন্দ্রিক কোনো আয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমাদের আলাদা কোনো আয়োজন নেই। ভাষা আন্দোলন পরিষদসহ কিছু সংগঠন সেখানে কিছু আয়োজন করে, আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত থাকে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির বাইরে আমাদের নিজস্ব কোনো কর্মসূচি নেই। যদি সরকার থেকে কোনো আয়োজনের জন্য বলা হয় তবে আমরা তা বাস্তবায়ন করব।

উল্লেখ্য, ভাষা আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) জরুরি বিভাগের গেট সংলগ্ন স্থান আমতলা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই আমতলা থেকে পাকিস্তানি সামরিক শাসকের জারি করা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে প্রথম মিছিল বের হয়। ওই মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এতে সালাম, রফিকসহ আরও অনেকে শহীদ হন। তাদের রক্তদানের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা রক্ষা পায়। এ কারণে পঞ্চাশের শেষ ভাগ এবং ষাটের দশকের প্রতিটি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয় এই আমতলা। ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আমতলায় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এমএইচ/জেএম