বোরহান উদ্দিন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম
বছরজুড়ে অযত্ন, অবহেলা নজরে পড়লেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রঙিন হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শুধু শহীদ মিনারই নয়, আশপাশের এলাকায়ও পড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের ছোঁয়া। বিশেষ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অপর্ণের শহীদ মিনার এলাকার দেয়ালগুলোতেও পড়ে রঙ-তুলির আঁচড়। একেকটি দেয়ালের খণ্ড যেন হয়ে ওঠে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশীদার। কয়েক দিনের কর্মযজ্ঞ শেষে ২১ ফেব্রুয়ারির দিনে দেয়ালগুলো যেন জলজল করে নানা রঙের মিশ্রণে।
শুধু কি তাই? শহীদ মিনারের আশপাশের ভবনের সীমানা প্রচীরের দেয়ালে দেয়ালে রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হয় বাংলা বর্ণমালা। যাতে জায়গা পায় ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের গৌরবগাথা, সংগ্রামের উত্তালের দিনগুলোর দৃশ্য। যা দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়।
পাশাপাশি বাঙালি ও বাংলাকে উপজীব্য করে লেখা কবি-মনীষীর নানা পঙক্তি ও উক্তিও শোভা পায় দেয়ালে দেয়ালে। জনপ্রিয় বাংলা কবিতাও ঠাঁই পায় দেয়ালে। তুলির আঁচড় লাগে শহীদ মিনার এলাকার সড়কেও। আল্পনায় রাঙিয়ে তোলা হয় সড়কের মাঝখান। খালি পায়ে সেই আল্পনা মারিয়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নেন সর্বস্তরের মানুষ।
তবে শহীদ মিনারের মতো এই দেয়ালগুলো যেন বছরজুড়ে থাকে অভিভাবকহীন অবস্থায়। ইচ্ছেমত দেয়াল লিখন, পোস্টার সাঁটানো হয় দেয়ালের লেখার উপরে। কোথাও আবার খসে পড়ে পলেস্তরা।
প্রতিবারের মতো এবারও সাজ-সজ্জার কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর। এমন উদ্যোগে যোগ দেন সাবেকরাও। সবাই মিলে হাতে হাত রেখে এগিয়ে নিয়ে যান এই বর্ণিল আয়োজন।
অঙ্কনের কাজে থাকা চারুকলার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই কাজটি তাদের জন্য আনন্দের, একই সঙ্গে সৌভাগ্যের। কারণে মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া, বুকের তাজা রক্ত ঝড়ানো মানুষগুলোর জন্য কাজ করা যায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে।
চারুকলার তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জন্য অহংকারের দিন। এ দিনকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় আমাদের হাতের ছোঁয়া থাকে। আমাদের চেষ্টা থাকে একুশের আবহে আল্পনায় বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ ফুটিয়ে তোলার। এই সুযোগ সবাই পায় না।’
অন্যান্য বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে একুশের আয়োজন।
২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ২১ ফেব্রুয়ারির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১২টার পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রথমে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। তারা বিদায় নেওয়ার পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারির প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, দিবসটি পালনে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ঢাবির সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত সকল কর্মসূচির বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্য কাজ করবে। ডিএমপি, র্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ডিএসসিসি এবং গণমাধ্যমসহ সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একুশে উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেছেন, একুশ উদযাপন আমাদের রাষ্ট্রীয় আচার ও ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়। সুন্দর আয়োজনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের টহল দেবে। তাছাড়া ঢাবির বিএনসিসি ও স্কাউটের স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন। পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকবে।
বিইউ/জেবি