images

জাতীয়

নানা অপরাধে চাকরিচ্যুতিসহ শাস্তি পেলেন ইসির ৬৯ জন

বোরহান উদ্দিন

৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি, অনিয়ম, সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, চাকরি থেকে পলায়ন, বিনা ছুটিতে দিনের পর দিন কর্মস্থলে না থাকার অভিযোগে ৬৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এদের মধ্যে চারজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কাউকে করা হয়েছে তিরস্কার। কারও আবার বেতন বৃদ্ধি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। কয়েকজনকে নিচের পদেও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

শাস্তি পাওয়া এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিভাগীয় মামলাগুলো হয়। তদন্ত শেষে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় একযোগে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল সংস্থাটি।

জানা গেছে, শাস্তি পাওয়া ৬৯ জনের মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা রয়েছেন ২৫ জন, এদের মধ্যে একজন উপ-সচিব ও একজন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাও রয়েছেন।

এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা রয়েছেন তিনজন। আর তৃতীয় শ্রেণির ২৫ জন ও চতুর্থ শ্রেণির ১৬ জন; এ মোট ৬৯ জনকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দিয়েছে ইসি।

কার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিল ইসি

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি, অনিয়ম, সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, চাকরি থেকে পলায়ন, বিনা ছুটিতে দিনের পর দিন কর্মস্থলে না থাকার অভিযোগে ৬৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

২০১৮ সালে পলায়ন করা কুমিল্লার লাকসামের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিতাসের উপজেলা কর্মকর্তা এসএম নাসির উদ্দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও আর্থিক অনিয়ম করায় তার বেতন বৃদ্ধি এক বছরের জন্য স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হককে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার দায়ে ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে। আর পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুসরণ না করে ল্যাপটপ কেনায় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মো. মোশারফ হোসেনের বেতন বৃদ্ধি ২ বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় বরখাস্ত হয়েছেন। পাশাপাশি অবৈধ আর্থিক লেনদেনের কারণে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এম কে আহমেদের বেতন বৃদ্ধি তিন বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ঘুষ নিয়ে ভুয়া ও জাল মঞ্জুরি আদেশ তৈরি করে অন্যকে টাইম স্কেল দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, ঢাকার সবুজবাগ থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম রেজিস্ট্রেশন ফরম ও  অনলাইন জন্মসনদ ও অন্য তথ্য যাচাই না করে সার্ভারে আপলোড করায় তার দুই বছরের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া এনআইডি জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে উপ-সচিব মো. নওয়াবুল ইসলামের বেতন এক ধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ফরিদপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হকও জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে শাস্তি পেয়েছেন। তাকে তিরস্কার করা হয়েছে।

এছাড়াও কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা ছামিউল আলম তিনজনকে বেআইনিভাবে ভোটার করেছেন। ৫টি এনআইডির সার্ভার কপিতে বেআইনিভাবে স্বাক্ষর করে জালিয়াতি করায় তিন বছরের জন্য বেতন একধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর পরিচয়পত্র নিবন্ধনের সময় দলিল যাচাই না করে দুইজনকে ভোটার তালিকায় যুক্ত করায় মাগুরা সদরের নির্বাচন কর্মকর্তা অমিত কুমার দাশ বেতন গ্রেডের তিন বছরের জন্য নিম্নতম ধাপে অবনমিত হয়েছে। পাশাপাশি ভোটার তথ্য আপলোডে শিথিলতা প্রদর্শন ও দায়িত্ব পালনে অবহেলায় ঢাকার উত্তরার নির্বাচন কর্মকর্তা ফাওজুল কবীর খানকেও সতর্ক করা হয়েছে। 

এদিকে, ফরিদপুরের নগরকান্দার নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেবকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি চাঁদপুরের নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বুলবুল আহম্মদ দুই ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী প্রার্থীর কাছে ঘুষ চাওয়ায় তিন বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। আরও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরিয়ান মো. নাসিমুল হক চাকরি দেওয়ার কথা বলে অবৈধ অর্থ লেনদেনের কারণে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হয়েছেন।

অন্যদিকে, কুড়িগ্রামের নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নানকে নির্বাচনের সময় প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ  চাওয়ায় সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটার স্থানান্তরে অনিয়ম করায় রাঙ্গামাটির নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বিল্লাল মেহেদীকেও সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ায় মাগুরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের বেতন দুই বছর বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নড়াইলের কালিয়ার নির্বাচন কর্মকর্তা বিশ্বাস সুজন কুমারকে কাজে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেওয়ায় সতর্ক করা হয়েছে।

এছাড়াও বান্দরবনের লামার নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ায় বেতন এক ধাপ নীচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যশোরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমানকে ইউপি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রত্যয়ন ও গেজেট প্রকাশ, কুষ্টিয়া দৌলতপুরের নির্বাচন কর্মকর্তা ইউপি নির্বাচনের ফলাফল যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রত্যয়ন ও গেজেট প্রকাশ, নিজের ড্রয়ার থেকে ল্যাপটপ চুরি ও জকিগঞ্জের সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় শাদমান সাকীব ইসিতে সরাসরি আবেদন করে আইন লঙ্ঘন করায় এদের সতর্ক করা হয়েছে। আর বদলির আবেদনে মন্ত্রীর স্বাক্ষর করে সুপারিশ করায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান সোহাগ হাওলাদারকে তিরস্কার করা হয়েছে।

নানা ধরণের শাস্তি পাওয়া এই ২৫ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের মধ্যে ইসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মজিবুর রহমানকে অন্যের পদোন্নতির পরীক্ষা আরেকজনকে দিয়ে দেওয়ায় সহযোগিতা করায় বেতন একধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ করায় বেতন নিচের স্তরে নেওয়ার সঙ্গে সাত বছরের জন্য পদোন্নতি স্থগিত করা হয়েছে ইসির ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলামকে। আরেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আলিমুল রাজী নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার সঙ্গে মারাত্মক অসদাচরণ করার দোষে এক বছরের বেতন বৃদ্ধি স্থগিতের শাস্তি পেয়েছেন।

এদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর খায়রুল আলমের এক বছরের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত ছাড়াও ভারতীয় নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিতে জড়িত থাকায় গাজীপুর সদরের বীরেন্দ্র চন্ত্র দেবনাথের দুই বছরের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নজীর হোসেন মীর, জিয়াউর রহমান, শওকত আলী চৌধুরী, মো. মোজাফ্ফর, মো. আলী হোসেন, মো. খায়রুল আলম, সেলিনা খাতুন, মো. মহসিন শেখ, পলাশ চন্দ্র পাল, জি এম সাদিক, মো. মহিনুজ্জামান, রনজিত চন্দ্র দাস, মো. নুরুজ্জামান, মাসুদ আলম, নুর উদ্দিন, অমলেন্দু দাস, টুম্পা রানী সাহা, সাইদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন খান, ফেরদৌস আলম, খন্দকার মোহাম্মদ আলী, এ এক এম সাইদুজ্জামানকে নানা ধরণের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে বাবুল, তরিকুল ইসলাম, ফারুক আব্দুল্লাহ জহির, নূর আহমদ, জামেনা খাতুন, মো. আব্দুল জব্বার, রেজাউল করিম, ডলি জেসমিন, আবু সালেহ, শরিফুল ইসলাম, সুমন কবীর, মো. রোকনুজ্জামান, বারিউল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন, স্বপন চন্দ্র ঘোষ, নবী নেওয়াজের বিরুদ্ধে অপরাধ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ইসি।

শাস্তি পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা দেখতে ক্লিক করুন

বিইউ/জেবি