খলিলুর রহমান
১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:১৭ পিএম
এ কে আজাদ মন্টু। রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্দা তিনি। দুবাই যাওয়ার উদ্দেশে রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে তিনি বাসা থেকে বের হন। সঙ্গে তার স্ত্রী। গন্তব্য হজরত শাহজালাল রহ. আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কিন্তু বিমানবন্দর যাওয়ার পথে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ওই দম্পতিকে।
রোববার সকাল ৯টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের সামনের রাস্তায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাদের।
এ কে আজাদ মন্টু ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার স্ত্রীকে নিয়ে আজ দুবাই যাওয়ার কথা। তাই সকাল সকাল বিমানবন্দরের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হই। কিন্তু কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে আসার পর পুলিশ আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। পরে সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে এখানে এসেছি। পরে আমরা ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছি।
পরে ট্রাফিক পুলিশের মাইক্রোবাসে করে ওই দম্পতি বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ভিয়েতনাম থেকে আসা কয়েকজন পর্যটককেও তাদের গাড়িতে করে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন।
নিকি নামের এক ভিয়েতনামের নাগরিক ঢাকা মেইলকে জানান, তিনি ঘুরতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। আজ দেশে ফিরছেন। রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেলে ছিলেন। সেখান থেকে সকালে বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করেন। কিন্তু গাড়ি চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় ট্রাফিক পুলিশের গাড়িতে করে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছান।
বিমানবন্দরের প্রবেশপথে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন বিদেশগামী যাত্রী ব্যাগ নিয়ে বসে আছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল- তাদের কারও কারও ফ্লাইট আজ বিকেলে বা সন্ধ্যার পর। কিন্তু বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতের জন্য তারা আগেই ঢাকায় এসেছেন। তবে রাস্তায় ভোগান্তি হলেও সময় মতো পৌঁছতে পেরে অনেক খুশি তারা।
মো. রবিউল ইসলাম নামের এক বিদেশ যাত্রী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি কাতার প্রবাসী। আজ বিকেল সাড়ে চারটায় আমার ফ্লাইট। ইজতেমার কারণে বিমানবন্দর এলাকায় গাড়ি চলাচল সীমিত শুনে ভোররাতেই ঢাকাই চলে আসি। তাই বিমানবন্দরের বাইরের গেটে বসে আছি।
আসার সময় পথে অনেক ভোগান্তি হয়েছে জানিয়ে রবিউল বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি পাবনায়। সেখান থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালে আজ ভোরে আসি। সেখান থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা যোগে বিমানবন্দর এলাকায় আসি। তবে বিমানবন্দর এলাকার আসার পর পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। পরে হেঁটে হেঁটে বিমানবন্দরের গেইটে আসি। ইজতেমার কারণে কষ্ট হলেও আল্লাহ ভালো কিছু দেবেন- এই আশায় সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে।
রুমন মিয়া নামের আরেক যাত্রী বিমানবন্দরে এসেছেন গতকাল শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে। তিনিও রবিউলের পাশে বসে আছেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে। আমি ১১ বছর ধরে দুবাইতে থাকি। যতবার বাংলাদেশে এসেছি ততবার ভোগান্তির শিকার হয়েছি। তবে এবার ভোগান্তি হলেও ইজতেমার কারণে আমি খুশি।
রুমন বলেন, বছরে একবার ইজতেমা হয়। সেখানে দেশ-বিদেশি অনেক মানুষ আসে। কল্যাণকামী মানুষের কষ্টের কাছে আমার কষ্ট কিছুই নয়। তাই আমি এই ভোগান্তিতেও খুশি আছি।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় বিদেশগামীদের আনাগোনা বেশি। ইজতেমার জন্য অনেকের ফ্লাইট হওয়ায় ১২ থেকে ১২ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে চলে এসেছেন।
এদিকে, বিদেশগামীদের সহযোগিতা করতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। তারা মাইক্রোবাসে করে যাত্রীদের বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানান, আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে ডাইভারশন থাকায় উত্তরার দিকের বেশকিছু সড়ক বন্ধ রাখা হয়। তবে বিদেশগামীদের বহন করা যানবাহন ওইসব সড়কে চলাচলে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা রাখা হয়। বিদেশগামীদের এই মাইক্রোবাসে করে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
কেআর/জেবি