দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:১৭ এএম
স্বপ্নের মেট্রোরেলের জন্য দীর্ঘ ৫ বছরের বেশি চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে মিরপুরের বাসিন্দাদের। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ চালু হয়েছে। এতে এই অংশের সড়কের জঞ্জাল সরে কিছুটা স্বস্তি আসলেও মেট্রোরেলের সুবিধা না পাওয়ায় প্রকৃত অর্থে ভোগান্তি কমেনি মিরপুরের বাসিন্দাদের। কারণ একদিকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু না হওয়ায় যাতায়াতে এখনই খুব বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে না, অন্যদিকে উত্তরা-আগারগাঁও অংশ চালু হলেও এর মধ্যবর্তী সাতটি স্টেশনের একটিও চালু হয়নি। ফলে মেট্রোরেল চালু হলেও মিরপুরের বাসিন্দাদের ভরসা সেই বাস।
মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও ছাড়া অন্য স্টেশনগুলো না খোলায় ক্ষোভ জানিয়ে মিরপুর এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, আমরা যারা পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়ায় বসবাস করি, মেট্রোরেল যেন আমাদের জন্য নয়। যাত্রী আছে তাও কেন মাঝপথের স্টেশনগুলো চালু করা হচ্ছে না?
মিরপুর-১০ এর বাসিন্দা আকরাম হোসাইন কাজ করেন আগারগাঁওয়ের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। দীর্ঘসময় মিরপুর-১০ গোল চত্বরে দাঁড়িয়েও বাস না পেয়ে তাকে অবশেষে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে ছুটতে হয় অফিসের উদ্দেশ্যে।
আকরাম হোসাইন এই প্রতিবেদককে বলেন, মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের কারণে গত কয়েক বছর যাতায়াতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অবশেষে স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হয়েছে, তবে এখনও স্বপ্নই রয়ে গেল আমাদের কাছে। মেট্রোরেল চড়ে সব কষ্ট-গ্লানি দূর হয়ে যাবে মনে করেছি, কিন্তু এখানকার স্টেশন চালু না হওয়ায় তা আর হলো না। এখনও সেই ভোগান্তি মাথায় নিয়ে বাসে চড়তে হয়। যথাসময়ে অফিসে পৌঁছতে পারব কিনা সেই শঙ্কা সবসময় কাজ করে।
স্কুলশিক্ষক আফিফার সাথে কথা হয় মিরপুর-১১তে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, যখন মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয় তখন আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। বছরের পর বছর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। নির্মাণ কাজ চলার সময় রাস্তার কোথাও সংকুচিত আবার কোথাও একেবারে চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায়। বর্ষাকালে হাঁটু-সমান কাঁদা-পানিতে পরিস্থিতি হয়ে উঠতো ভয়াবহ। রাস্তার দুই পাশের আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের চিত্র। মেট্রোরেল চালু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মিরপুরের বাসিন্দাদের সেই ভোগান্তি নিয়েই বাসে চলাচল করতে হচ্ছে।
বাকি সাতটি স্টেশন করে চালু হবে জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট উপ-প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত গণসংযোগ কর্মকর্তা) নাজমুর ইসলাম ভূইয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ধীরে ধীরে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশনে যাত্রীর চাপ কমছে। কোনো কোনো দিন অধিকাংশ কোচ খালি যাচ্ছে। যাত্রী ডিমান্ড বাড়লেই বাকি স্টেশনগুলো খুলে দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এখনও আমরা পুরোপুরি বাণিজ্যিক যাত্রায় গিয়েছি বলা যাবে না। যারা এখন ট্রেনে চড়ছেন, শখ করে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন। এখনও অন্য স্টেশনগুলো খুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। খুললেও চাহিদার আলোকে ২/১টি স্টেশন খোলা হবে। যা নির্ভর করবে যাত্রী উপর।
উল্লেখ্য, উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০.১ কিলোমিটার। গত ২৮ ডিসেম্বর ১১.৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মেট্রোরেলের মোট ১৭টি স্টেশনের মধ্যে এই অংশে আছে ৯ স্টেশন। উদ্বোধনের পরদিন সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও দিয়াবাড়ী ও আগারগাঁও ছাড়া এই অংশের বাকি ৭টি স্টেশন চালু করা হয়নি।
এই স্টেশনগুলো হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া। এসব স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় এখনও নির্মাণ কাজ চলছে। কোথায়ও কাজ প্রায় শেষের দিকে। কোথায়ও সংস্কার করা হচ্ছে নিচের সড়ক।
২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি-৬ শীর্ষক এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর নির্মাণের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ২০১৭ সালের ২ আগস্ট।
ডিএইচডি/জেএম