মোস্তফা ইমরুল কায়েস
২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২৫ এএম
নাজমুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। এক যুগ ধরে তিনি ঢাকার মিরপুর এলাকায় বসবাস করেন। ফুটপাতে ঝালমুড়ি বিক্রি করে তার সংসার চলে। বছর কয়েক আগে ঢাকায় তার এক স্বজন মারা যায়। তাকে দাফনের জন্য মিরপুর-১২ থেকে রওনা হয়েছিলেন আজিমপুর কবরস্থানের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এই পথ যেতে তার সময় লেগেছিল তিন ঘণ্টা। ফলে সেই স্বজনের মুখ শেষবারের মতো দেখতে পারেননি। সেই আফসোস তাকে এখনো কষ্ট দেয়।
শুধু নাজমুল ইসলাম নন, তার মত লাখ লাখ মিরপুরবাসীর কাছে কয়েক বছর আগেও পল্টন, প্রেসক্লাব ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়া ছিল ভয়াবহ এক ভোগান্তির নাম। কিন্তু সেসব ভোগান্তি পেছনে ফেলে যানজটহীন যাতায়াতের স্বপ্ন দেখছেন তারা। তারা মনে করছেন, মেট্রোরেল মিরপুরবাসীর জন্য বড় এক আশীর্বাদ হবে। সময় ও ভোগান্তি দুটোই বাঁচবে।
পল্লবী এলাকার ইসরাত জাহান বলছিলেন, খুব ইচ্ছে ছিল মেয়েকে বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াব। মেয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও যানজট ও ভোগান্তির কারণে সেই স্বপ্ন বাস্তব হয়ে ওঠেনি। এখন মেয়ে বড় হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পেলে বাসা থেকেই অল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
শেওড়াপাড়া এলাকার সাবেক ব্যাংকার আজিজুল ইসলাম বলেন, মেট্রোরেল যখন হচ্ছিল তখন অনেকে অনেক কথা বলেছেন। ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১০ যেতে ঘাম ছুটে যেত। অনেক আত্মীয়-স্বজন ভয়ে বরিশাল থেকে আসতে চাইত না। আবার খুব জরুরি কাজে বের হলেও তা খুব সহজে শেষ করা যেত না। এমনও দিন গেছে সারাদিন পথেই কেটেছে। অবশেষে সেসব দিন শেষ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা একমাত্র মিরপুরবাসীই বোঝে। মেট্রোরেল চালু হলে নগরের বাসগুলোতে ভিড় কমবে। লোকজন সহজে নিত্যদিনের কাজ সারতে পারবে। বদলে যাবে মানুষের চিন্তাভাবনাও।
মোস্তাক আহমেদ তিন বছর ধরে বোনের বাসায় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করেন। রাস্তায় যানজট ও ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে প্রতিদিন ভোরবেলা বের হন বাসা থেকে। তিনি বলেন, গত তিনটা বছর কি কষ্ট যে করেছি তা বলে বোঝানো যাবে না। মেট্রোরেল চালু হলে আমার কষ্টের দিন ফুরাবে। প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে বোন আমার জন্য নাস্তা তৈরি করত। কিন্তু মেট্রোরেল চালু হলে ধীরস্থিরভাবে যেতে পারব। আসলে এটা যে কি রকম খুশি তা অন্য কাউকে বোঝানো সম্ভব না। এখন আমরা পাখির মতো সাই করে উড়ে যাব। আর কাজ সেরে বাসায় ফিরব। মেট্রোরেল আগেই দরকার ছিল। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
মিরপুরের যত মানুষের সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের প্রত্যেকেই জানিয়েছেন মেট্রোরেল তাদের জন্য বড় আশীর্বাদ। মিরপুরের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আগে মিরপুর থেকে গুলিস্তান চকবাজার এবং সদরঘাট যেতে তাদের ঘাম ছুটে যেত। মালামাল কিনে এনে সেদিন আর দোকান চালাতে পারতেন না।
তবে মিরপুরবাসীর দাবি, মেট্রোরেলের ভাড়া যেন সরকার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসে।
উল্লেখ্য, আগামী বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সাধারণ যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়ার সুযোগ পাবেন পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে।
এমআইকে/জেএম/এএস