দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:০২ এএম
যানজট থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাঁচ দিন পর ২৮ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপত্য শৈলীর উদ্বোধন দেখতে মানুষ যেমন অধীর আগ্রহে আছে তেমটি একটি বিষয় তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ওপরের ঝকঝকে আলোর ঝলকানি আর মেট্রোরেলের ছুটে চলা মানুষের দৃষ্টি কাড়লেও সড়কে এখনো ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকায় বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নগরবাসী। এজন্য দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তারা।
উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার মেট্রোরেলের প্রথমিকভাবে দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও অংশে ১১.৭৩ কিলোমিটার পথ চালু হবে ২৮ ডিসেম্বর। মোট ১৭ স্টেশনের মধ্যে ৯ স্টেশনে প্রথম দফায় চলবে মেট্রোরেল। আগামী বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলের এই সেবার উদ্বোধন করলেও মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে।
উদ্বোধনের সময় কাছাকাছি চলে আসায় শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এখন চলছে স্টেশনগুলো সাজানোর কাজ। স্টেশনগুলোর বিপণিবিতান, যাত্রী বিশ্রামাগার, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ ও বিনোদন কেন্দ্রে শেষ মুহুর্তের ঘষামাজা চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নাগরিকদের এক ছাদের নিচে নানা সুবিধা দিতে স্টেশনগুলো সাজানো হয়েছে। নিচে সড়কে প্রাকৃতিক আলোর নিশ্চয়তা দিতে মেট্রোরেল উঁচু করা হয়েছে। তবে তাতে খুব এখন সুফল আসেনি। কারণ সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা উঁচু ভবনের কারণে সূর্যের আলোর দেখা মেলে না নিচের সড়কে। রাতের বেলায় অন্ধকার তো থাকেই। দিনেও আলোর দেখা মেলে না। তবে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে তারা।
এমআরটি-৬ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ২/১ স্টেশন ছাড়া প্রায় প্রতিটি স্টেশনের নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকার। যেখানে দিনেও চালকরা হেডলাইট চালিয়ে যাতায়াত করছেন। অন্যদিকে নির্মাণাধীন স্টেশনে কর্মীরা কাজ করছেন আলাদা আলোর ব্যবস্থায়।
আগারগাঁও স্টেশন ঘুরে দেখা যায়- স্টেশনের দুই পাশে খোলা জায়গা থাকায় কিছুটা আলো প্রবেশ করছে নিচের সড়কে। কিছুটা সামনে যেতেই পশ্চিম কাজীপাড়া হয়ে মিরপুর-১০ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি স্টেশনের নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এর মধ্যে রয়েছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া স্টেশন। একই চিত্র উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার মেট্রোরেলের বেশিরভাগ স্টেশনের।
স্থানীয়রা জানান, দিনেও অন্ধকার থাকায় প্রায়ই ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে ছিনতাইকারীরা ওঁৎ পেতে থাকেন। অন্ধকারে এমন দীর্ঘ স্টেশন যাত্রায় যে কারও ভয়ে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।
কাজীপাড়ায় কথা হয় স্কুলশিক্ষক আবু হেনার সঙ্গে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, দিনের বেলাতেও স্টেশনগুলোর নিচের অংশ অন্ধকার থাকে। পর্যাপ্ত আলো না থাকায় যাতায়াত করতে ভয় লাগে। দ্রুত যেন এই সমস্যা সমাধান করা হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
আবু হেনা আরও বলেন, স্টেশনগুলো আরও খোলামেলা করার সুযোগ ছিল। এছাড়াও বড় স্থাপনা নির্মাণে সৌরশক্তির যথার্থ ব্যবহারের বিধান থাকলেও মেট্রোরেল স্টেশন কিংবা কোথাও প্রাকৃতিক শক্তি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। বিদ্যুতের এমন ঘাটতিকালে যা সহায়ক হতো বলে মনে করেন তিনি।
সেখানে থাকা আরিফ হাসান নামে আরেকজন বলেন, কোনো কারণে সড়কের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে ভয় লাগে। রাতের বেলায় তো বটেই, দিনের বেলাতেও ভুতুড়ে অবস্থা থাকে। দ্রুত আলোর ব্যবস্থা করলে এই ভয়টা থাকবে না।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলের যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। সৌন্দর্য বর্ধনে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। দুই সড়কের মাঝে আইল্যান্ড তৈরি করা স্টিলের ব্যারিয়ার দেওয়া হচ্ছে। যেখানে কেউ সহজেই প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া মেট্রোরেল পরিচালনায় আলাদা পুলিশ বাহিনী গঠন হলে সমস্যা কেটে যাবে। সেই সঙ্গে স্টেশনগুলোর নিচেও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে।
২৮ ডিসেম্বর স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হবে। ‘বাঁচবে সময় বাঁচবে তেল, জ্যাম কমাবে মেট্রোরেল’ এই বিশেষ উদ্যোগের সফল যাত্রায় উদ্বোধনের দিনে টিকিট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে চড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
জানা গেছে- দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এজন্য থাকবে পুলিশের আলাদা একটি ইউনিট। এতে থাকবে ৩৫৭ জন পুলিশ সদস্য। তারা যাত্রীসহ পুরো মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবেন।
নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ওঅ্যান্ডএম) ফারুক আহমেদ বলেছেন, আমরা হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই হয়ে তা ৩৫৭ করা হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবে ১ হাজার ৩৯ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এ ইউনিটের সদস্যদের জন্য থাকবে আলাদা ইউনিফর্ম। তবে ইউনিফর্ম এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ডিএইচডি/এমআর