মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০০ এএম
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পর বিজয়ের মাসে চালু হচ্ছে ‘আরেক স্বপ্ন’ দেশের প্রথম মেট্রোরেল। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনের এই নতুন দিগন্ত উদ্বোধন হচ্ছে ২৮ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন। যদিও সাধারণ যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন পরদিন ২৯ ডিসেম্বর থেকে।
অত্যাধুনিক এই মেট্রোরেলে চড়ে কোনো যানজটে পড়তে হবে না, দ্রুততম সময়ে পৌঁছানো যাবে গন্তব্যে। আধুনিক টিকিট সিস্টেমের কারণে ভাড়া নিয়েও কোনো বসচার সুযোগ নেই।
নগরবাসীর জন্য এতসব সুবিধা নিয়ে আসা মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ঝড়-তুফানের সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে মেট্রোরেল কি চলবে? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেলের জন্য এরইমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছেৃ শক্তিশালী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। জাতীয় গ্রিডের বিপর্যয়ের মতো বড় ঘটনা ছাড়া মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার তেমন কোনো শঙ্কা নেই। সবকিছুরই বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-৬) সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেল পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে উত্তরা ডিপো এবং মতিঝিল এলাকায় দুটি রিসিভিং সাবস্টেশন থাকবে। মতিঝিল রিসিভিং সাবস্টেশনে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) মানিকনগর গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভির দুইটি পৃথক সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে। আর উত্তরা রিসিভিং সাবস্টেশনে পিজিসিবির টঙ্গী গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভিএর একটি সার্কিট ও ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) উত্তরা গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভির অপর একটি সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে। উভয় রিসিভিং সাবস্টেশনে ব্যাকআপ হিসেবে একটি করে অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার থাকবে।
এছাড়াও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ডেসকোর ৩৩ কেভি সাবস্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে ৩৩ কেভির বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকবে। ফলে মেট্রোরেল পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা নেই। কোনো কারণে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া না গেলে মেট্রোরেলের নিজস্ব এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মেট্রোরেলকে নিকটবর্তী স্টেশনে নেওয়া হবে। এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম মূলত ব্যাটারি ব্যাকআপ সিস্টেম, যা মেট্রোরেলের রিজেনারেটিভ ব্রেকিং এনার্জির মাধ্যমে নিয়মিত চার্জ হতে থাকবে। এমআরটি লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল পরিচালনায় ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেমে (ওসিএস) ১৫০০ ভোল্ট ডিসি বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হবে।
এমআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, মেট্রোরেলের বিদ্যুতের বিষয়টা খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। সর্বপ্রথম এটাই নিশ্চিত করা হয়েছে। ট্রেন চলার জন্য তিনটা গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে। তারপরও কমন একটা লাইন নিয়েছি। এই চারটা লাইনের প্রত্যেকটা ডাবল করে নেওয়া হয়েছে। একটা যদি চলে যায় সাথে সাথে দ্বিতীয়টি দিয়ে চলবে। এরকম ছয়টা সিস্টেমের ভেতরে পৃথক সার্কিট করা আছে। এর যে কোনো একটা চলে গেলে অন্যটা দিয়ে লাইন সচল থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ট্রেনের নিজস্ব পাওয়ার ক্যাপাসিটিও রয়েছে। বিদ্যুৎ যদি ফেল করে তাহলে অটোমেটিক জেনারেটরগুলো চলবে। তার সাথে একটা ব্যাকআপ তৈরি করা আছে। অর্থাৎ মূল জেনারেটর যদি কোনো কারণে কাজ না করে তাহলে ব্যাকআপ থেকে কাজ করবে। কিন্তু ব্যাকআপটা বসে থাকবে না, কখনও মূলটা চলবে কখনও ব্যাকআপটা চলবে। দুটা সবসময় চালুর ভেতরে থাকবে, যাতে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কতটা স্ট্রং করা হয়েছে মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) নির্বাহী প্রকোশলী সুমন কবির ঢাকা মেইলকে বলেন, অনাকাঙ্খিতভাবে যদি কখনো কমপ্লিট ব্ল্যাকআউট হয় তখন তো সারা বাংলাদেশেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে। এছাড়া স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ঝড়-তুফানে মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে না।
টিএই/জেএম