images

জাতীয়

বিজয়ের দিনে পরিবহন শ্রমিক জলিলের অন্যরকম ভালোবাসা

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন

১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:২০ পিএম

লাখো বাঙালির আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় বরণে বর্ণিল সাজে রাজধানী। লাল-সবুজ বর্ণের আলোকসজ্জা শোভা পেয়েছে বিপণিবিতান থেকে শুরু করে সর্বত্রই। যেন উজ্জ্বল এক পতাকায় আলোকিত ঢাকা। এমন আয়োজনের অংশীজন ঢাকাসহ সারাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। যার প্রমাণ মিলেছে পরিবহন শ্রমিক জলিলের দেশের প্রতি ভালোবাসায়।

৩৮ বছর বয়সী এই পরিবহন শ্রমিক কাজ করেন দেওয়ান পরিবহনে। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) নীলক্ষেত মোড়ে যাত্রী তুলতে থাকা অন্য বাসগুলো থেকে সবার নজর কেড়েছে তার বাসটি। কারণ, লাল-সবুজ রঙের ছোট ছোট এক হাজার পতাকায় সাজানো সেই বাস। ৫২তম বিজয় দিবসে যা দেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

যাত্রীবাহী বাসটি রাজধানীর আজিমপুর-নিউমার্কেট হয়ে চলে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত। তবে অন্যদিনের তুলনায় বিজয় দিবসের দিনে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগে শুধু এই পথের যাত্রীরাই নয়, মুগ্ধ হয়েছেন পথচারীসহ সবাই।

জলিল জানান, বাসটি সাজাতে এক হাজারেরও বেশি পতাকা লেগেছে। আঠার সাহায্যে পতাকাগুলো বাসের চারপাশে লাগানো হয়েছে।

নিজের অনুভূতি জানিয়ে জলিল বলেন, বাড়িতে আল্লাহ রাখলে পাঁচজন মানুষ। সামনে আরও নতুন মেহমান আসবে। গাড়িতেই আমাদের শ্রমিকদের জীবন, আমার ঘর। তাই নিজ ঘরটাকে মনের মতো সাজাতে চেয়েছি। আমার মনের মতোই হয়েছে। গাড়ি দেখা যায় না, শুধু লাল আর সবুজ। আজ চিন্তা করেছি- যাত্রীদের সঙ্গে বেশি কথাও বলব না, যে যা ভাড়া দেয় নিয়ে নেব।

Victory Day Special৩৮ বছর বয়সী এই পরিবহন শ্রমিক বলেন, অনেকেই এই সাজানোকে ভালোভাবে নিতে চায় না। বাড়াবাড়ি, পাগলও বলেছে। তবে সকাল থেকে অনেকেই বাসের ছবি তুলেছেন। আপনার মতো (প্রতিবেদক) অনেকেই আমার সঙ্গে কথা বলেছে, এটাই আমার প্রাপ্তি।

ভিন্ন রূপে বাসটি সাজানোর খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশ্ন এড়িয়ে জলিল বলেন, মনের খুশি বড় খুশি। আমার ভালো লেগেছে। টাকা-পয়সা আইজ আছে, কাল নাই। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে আগামীকালও পতাকাগুলো রাখার ইচ্ছে আছে।

বিজয় দিবসের প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে এই পরিবহন শ্রমিক বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের চাওয়া ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা। যে হারে সবকিছুর দাম, দিনে-রাতে কাজ করেও চাল কিনলে ডাল কিনতে পারি না। সময়টা বড়ই কঠিন যাচ্ছে। এমন যদি হতো- নতুন করে সবকিছু সুস্থ-স্বাভাবিক চলছে। পরিবার নিয়ে চারটা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার পরিস্থিতি তৈরি হতো। যা কামাই-রোজগার, এটাও বাড়লে ভালো হয়। বউ-বাচ্চা নিয়ে ভালো থাকতে চাই।

Victory Day Specialহাজার পতাকায় সাজানো বাসটি ঘিরে যাত্রীদেরও আগ্রহের শেষ নেই। সাহিদ উজ্জ্বল নামে তাদের একজন ঢাকা মেইলকে বলেন, বিজয়ের মাস তো উল্লাসের মাস। বাঙালিদের চিরদিনের গৌরব, অসীম সাহস, বীরত্ব ও আত্মদানে মহিমান্বিত অর্জন মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দিন আজ। এ দিন সর্বসাধারণের, তারই জানান দিচ্ছে নগরীর সর্বত্র লাল-সবুজের উপস্থিতি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে মো. হানিফ নামে এক মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা মেইলকে বলেন, বিজয়ের ৫২তম বছরে বাঙালি চেতনার উপস্থিতি সব স্থানেই। এটাই আমাদের প্রাপ্তি। স্বাধীনতার বার্তা উত্তরসূরি, নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের বীজ বপনে সাংস্কৃতিক জাগরণও প্রয়োজন। চর্চার মধ্যে দিয়ে দেশাত্মবোধের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি মমত্ববোধ বাড়বে আগামী প্রজন্মের।

ডিএইচডি/আইএইচ