নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ মার্চ ২০২২, ০৮:০৯ এএম
তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে বিদ্যুৎ ছাড়া যেন আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। বিশ্ব যত আধুনিক হচ্ছে দিনদিন বিদ্যুতের চাহিদা ততো বাড়ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে পুরো বিশ্ব। তাই বিশ্ব এখন ঝুঁকছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে। বর্তমান বিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তির মূল উৎস হচ্ছে জলবিদ্যুৎ।
সাধারণত নদীর প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে। পড়ন্ত বা স্রোত আছে এমন নদীর পানির চাপকে ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এ জলবিদ্যুৎ। একবার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা গেলে খুব কম শক্তি ব্যয়ের মাধ্যমে এটি চালানো যায়। এর মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানী, যেমন: তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদিচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় খুব কম পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে- বাংলাদেশে ১৯০৬ সালে সর্বপ্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এদেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাইয়ে অবস্থিত। কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে রাঙামাটি জেলায় কাপ্তাই বাঁধ তৈরি করা হয়। ১৯৬২ সালে ৪৬ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট নিয়ে কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীকালে ৫০ মেগাওয়াট করে আরো তিনটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে তিন নম্বর ইউনিটটি ১৯৮২, এবং ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিট চালু হয় ১৯৮৭ সালে। এর মধ্যে প্রথম তিনটি বসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিতে। পরের দুটি স্থাপন করে জাপানের টোকিও ইলেক্ট্রিক পাওয়ার সার্ভিসেস কোম্পানি (টেপ্সকো)। এ দুটি স্থাপনের সময়ই আরো দুটি ইউনিট স্থাপনের জন্য আনুষঙ্গিক সুবিধা রেখে দেয়া হয়। জাপানী এই প্রতিষ্ঠানটিই ১৯৯৮ সালে সেখানে আরো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব কিনা সে বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তারা জানায়, বর্তমান অবকাঠামো এবং এই পানি দিয়েই কাপ্তাই হ্রদে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরো দুটি ইউনিট বসানো সম্ভব। তাতে কাপ্তাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরো কমে আসবে। বর্তমানে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় বিশ পয়সা।
জলবিদ্যুৎ এর প্রধান কাঁচামাল হলো পানি। জলবিদ্যুৎ তৈরি করতে গেলে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োজন একটি বিশাল আকার নদী যেখানে প্রায় সারা বছর জলের অভাব থাকবে না। বিশাল আকারের জলকে জলবিদ্যুৎ তৈরীর কাজে লাগানোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা হয়। এর ফলে সারা বছর পানির যোগান থাকে ও প্রয়োজন মতো পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সহজ হয়। বিশাল আকারের সঞ্চিত জলকে একটি সরু মাধ্যম দিয়ে প্রচন্ড গতিসম্পন্ন অবস্থায় বেরোনোর মত একটি রাস্তা দেওয়া হয় যা নদীর এক পাশ থেকে অন্য পাশে আসতে পারে। আর এই জায়গাতে বসানো থাকে বিশাল আকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী মটর বা টারবাইন। যে স্থান দিয়ে নদীর আটকানো পানি প্রচুর গতিতে অন্যপাশে প্রবাহিত হয় সেই স্থানে একটি বিশাল আকারের চাকা লাগানো থাকে।
এই চাকাতে অনেক বড় বড় প্লেট বসানো থাকে যে প্লেটে জলের গতি চাপ দিলে পুরো চাকাটি প্রবল জোরে ঘুরতে থাকে। একটি চাকার মাঝে যেমন কোনো কিছু না রাখলে চাকাটি করতে পারেন ঠিক একই রকমভাবে এই টারবাইন এর চাকার মাঝে লোহার দণ্ড জোড়া থাকে আর এই দণ্ডের অপর প্রান্তে কয়েক রকম ছোট ছোট গিয়ার দিয়ে এর ঘূর্ণনকে আরও শক্তিশালী করে মোটর জুড়ে দেয়া হয়। টারবাইন থেকে যে ঘূর্ণন গতি তৈরি করা হয় সেই গতির মাধ্যমে জেনারেটর এ থাকা ওই ধরনের বিশাল আকারের মোটরকে ঘোরানো হয়। যেকোনো ধরনের মোটর যদি প্রবল জোরে ঘটানো হয় তবে তার থেকে ইলেকট্রিক কারেন্ট সৃষ্টি হয় তাই টারবাইন এর সাহায্যে ঘোরানো ওই মটর থেকে যে ইলেকট্রিক কারেন্ট তৈরি হয় তা কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়।
টিএই/এএস