নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১০ এএম
ঢাকায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি তিন মাস আগে থেকেই শুরু হয়। পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিজ সংগঠনের কর্মীদের ছিনিয়ে নিতে আনসার আল ইসলামের নেতারা রেকি করেন আদালত প্রাঙ্গণে৷ কয়েকটি হাজিরার দিন তারা আদালতে যান, সার্বিক অবস্থা ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করেন৷ তিন থেকে চার মাস রেকি করার পর সিদ্ধান্ত নেন৷
আদালতে জঙ্গিদের আনা-নেওয়ার সময় কতজন পুলিশ থাকে নিরাপত্তায়? তাদের হাতে কী ধরনের অস্ত্র থাকে? আদালতে আনার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা কেমন হয়?-এসব বিষয় কয়েকটি হাজিরায় ভালোমতো খেয়াল করা হয়৷ এরপরই পুলিশকে হামলা করে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আঁটে নিষিদ্ধ ঘোষিত এই জঙ্গি সংগঠন৷
‘তারা খেয়াল করে যে অন্য আসামিদের মতো জঙ্গিকে ‘ক্যাজুয়ালি’ আদালতে আনা হয়৷ তাছাড়া আদালতে আনার পর কড়া পাহারা থাকে না,’ বলছিলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)-এর এক কর্মকর্তা৷
আরও পড়ুন: দুই জঙ্গি ছিনতাই: দীপনের বাবা-স্ত্রীর কণ্ঠে আতঙ্কের সুর
রোববার (২০ নভেম্বর) আদালত থেকে আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়৷ তাদের সাথে থাকা অন্য জঙ্গিদেরও ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল৷ তাদের প্রস্তুতিও ছিল সেরকম৷ এজন্য বেশ কয়েকজন সহযোগী আদালতের বিভিন্ন জায়গায় রেডি ছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্যদের নিতে ব্যর্থ হয়৷
‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমদের ধারণা ৭/৮ জন জঙ্গি ছিনতাই কাজে জড়িত ছিল৷ স্প্রে করে জঙ্গি ছিনিয়ে নিলেও তাদের অন্য সকল প্রস্তুতি ছিল৷ তবে তা ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি,’ জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত পুলিশের একজন কর্মকর্তা জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে জানান৷
এদিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশ একটি চাবি ও লোহা কাঁটার জন্য ব্লেড উদ্ধার করেছে৷ এ থেকেই প্রমাণ হয় যে, জঙ্গিদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল৷
২০১৪ সালে সতীর্থ জঙ্গিদের ছিনিয়ে নিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল আরেক জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবির সদস্যদের৷ সে বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান আটকে বোমা ছুড়ে ও গুলি চালিয়ে জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ও রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ এবং বোমা বিশেষজ্ঞ জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে ছিনিয়ে নেয়৷
ত্রিশালে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হলেও সেটা রোববারের মতো এত সহজ ছিল না৷ কোনোরূপ বোমা না ফাটিয়ে বা গুলি না করে পুলিশের মুখে স্প্রে করে ফাঁসির দুই আসামি নিয়ে চলে যায়৷
সেদিন আদালতে ১২ জঙ্গির নিরাপত্তায় ছিল চারজন পুলিশ৷ অথচ এমন জঙ্গিদের বেলায় আরেও বেশি নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকার কথা, কিন্তু তা ছিল না৷ এছাড়া পালিয়ে যাওয়া দুজনের জন্য ছিল মাত্র একজন পুলিশ, যা একেবারেই কাম্য না৷ যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকার কারণে আনসার আল ইসলাম তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যায়৷
শুধু পুলিশের দোষ?
ছিনতাইয়ের ঘটনা পূর্ব-পরিকল্পিত উল্লেখ করে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে এই দায় পুলিশের ওপর বর্তায় সন্দেহ নাই৷ আগেও সবাই পুলিশকে দায়ী করেছে৷ কিন্তু এমন ঘটনার দায় কারা ও আদালত কর্তৃপক্ষও এড়াতে পারে না৷
আরও পড়ুন: পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার
‘আমাদের কাছে তথ্য আছে যে, কারাগারে অবৈধভাবে মোবাইল ব্যবহার করা হয়৷ জঙ্গিরাও এই সুযোগ নেয়৷ অনেকে ল্যাপটপ ও টেলিভিশনও ব্যবহার করে থাকে৷ জেলে এমন সুযোগ পেয়েছে বলে জঙ্গিদের পক্ষে পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়,’ অভিযোগ করে বলছিলেন এক কর্মকর্তা৷
অন্যদিকে আদালতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে মনে করেন পুলিশের কর্মকর্তারা৷ আদালত প্রাঙ্গণ সাধারণত জনাকীর্ণ থাকে৷ বিভিন্ন ধরনের আসামিদের সেখানে বিচারের জন্য আনা হয়৷ তাই সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ নিয়োজিত করার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন পরিকল্পনা ও তদারকি৷ -ডয়চে ভেলে
জেবি