images

জাতীয়

দলবেঁধে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে গ্রাজুয়েটরা

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন

১৯ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪০ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫৩তম সমাবর্তন ঘিরে শনিবার গ্রাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত ছিল ক্যাম্পাস। গ্রাজুয়েটরা ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যসহ লোকে লোকারণ্য ছিল জাতীয় শহীদ মিনারসহ আশপাশের এলাকা। দুপুরের দিকে দেখা যায়, পুরো এলাকা ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। সেই সাথে গ্রাজুয়েট ও তাদের স্বজনদের দেখা গেছে জুতা পায়ে দলবেঁধে শহীদ মিনারের বেদিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এবারের সমাবর্তন। উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই আয়োজনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধে শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত টিএসসি ক্রসিং থেকে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট থেকে দোয়েল চত্বর এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তায় গণপরিবহন চলাচল ছিল বন্ধ। সমাবর্তনের নিরাপত্তার স্বার্থে শাহবাগ থেকে টিএসসি-দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়। যে কারণে এসব পথের নিয়মিত যাতায়াতকারীরা কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েন।

Special Newsএদিন সকাল থেকেই শহীদ মিনারে দেখা যায় অসংখ্য গ্রাজুয়েটকে। যেখানে হকারদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। শহীদ মিনারের বিভিন্ন স্থানে বসে খাবার গ্রহণ করতেও দেখা যায় কাউকে কাউকে। খাবার শেষে উচ্ছিষ্ট শহীদ মিনারসহ আশপাশের খোলা স্থানেই ফেলছেন তারা। সেই সঙ্গে জুতা পায়ে শহীদ বেদিতে উঠতে দেখা গেছে গ্রাজুয়েটসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের। অবস্থা এমন হয়েছে যে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয় স্থানটি।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আলম নামে এক রিকশাচালক ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হলে এখানে এসে বসি। উপরে কোনোদিনই যাইনি। কেন যান না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি মূর্খ মানুষ। যদি কোনো কারণে শহীদেরা কষ্ট পায়। দূর থেইকা দেখি, গ্রামে গেলে ছোট মেয়েটা শহীদ মিনার নিয়ে জানতে চায়। আজ মামারা (ছাত্ররা) বোরকা পরে (গাউন গায়ে) জুতা নিয়ে উঠছে। দেখে খারাপ লাগছে। ওনারা তো দেখি আমাগো থেইকাও কম বুঝেন।

Special Newsএ সময় সেখানে অবস্থান করা আরেক ব্যক্তি ঢাকা মেইলকে বলেন, ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর নিদর্শনে এসে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠা শহীদদের রীতিমতো অবমাননার শামিল। পড়াশোনা শেখার আগে অন্তত সবার দেশ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

শহীদ মিনারে জুতা পায়ে উঠা গ্রাজুয়েটদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, গাউন পরে এসেছেন ছবি তুলতে, স্মরণীয় দিনটিকে ফ্রেমবন্দি করতে। জুতা পায়ে ওঠা ঠিক হয়নি বলে জানান কেউ কেউ। যদিও কোনো কোনো গ্রাজুয়েটের দাবি, ২১ ফেব্রুয়ারি তো আজ না। এছাড়া অনেকেই উঠেছেন, এটা তেমন দোষের কিছু না।

Special Newsএ সময় শহীদ মিনারে জুতা পায়ে ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্যগ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা লামিয়া আক্তার ঝর্ণা ঢাকা মেইলকে বলেন, শহীদ মিনারে জুতা নিয়ে ওঠা ঠিক হয়নি। তবে যে পরিমাণ ধুলা বেদিতে, জুতা ছাড়া উঠলে ময়লা লেগে যাবে। এ সময় এ শিক্ষার্থীকে সেলফি তোলাসহ গ্রুপ ছবি তুলে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।

গ্রাম থেকে মেয়ের সমাবর্তনে যোগ দিতে এসেছেন স্কুলশিক্ষক রফিক উল্লাহ মাস্টার। তার সাথে প্রতিবেদকের কথা হয় ঢাকা মেডিকেল বর্হিবিভাগে সামনে। এসময় তিনি বলেন, বাহান্নর ভাষা আন্দোলন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এ শহীদ মিনার। দেখলে মনে পড়ে যায় সে দিনগুলোর কথা। গ্রামে থাকলেও রেডিওতে শুনেছি শহীদের কথা। আহ... কত মর্মান্তিক। ছেলে-মেয়েদের জুতা পায়ে উঠতে দেখা ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। তাই আড়ালে দাঁড়িয়ে আছি। আমার গ্রামের অজপাড়া গাঁয়ের ছাত্ররা এমন দৃশ্য দেখলে কষ্ট পেত। সারা বছর স্কুলের ছোট্ট শহীদ মিনারটির কতইনা যত্ন নেয় স্কুল শিশুরা! বলেই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলতে দেখা যায় তাকে।

Special Newsএ স্কুলশিক্ষক আরও বলেন, আমার জানা মতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাদের শিক্ষার্থীদের পায়ে আজ মিনারটি পিষ্ট। এসব শিক্ষার্থীর গ্রাজুয়েট হওয়ার আগে দেশের ইতিহাস নিয়ে পাঠদান প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। যদিও সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় শহীদ মিনারে ২১ ফেব্রুয়ারির শ্রদ্ধার্ঘ্য অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান প্রদান করে থাকে। তবে সার্বিক দেখ-ভাল ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ডিএইচডি/জেএম/আইএইচ