ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: তাণ্ডবের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু

বাতাসের শক্তি সঞ্চার করে প্রচণ্ড বেগে উপকূলে আছড়ে পড়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ক্রমেই ঘনীভূত হয়ে আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি। সেই সঙ্গে দীর্ঘসময়ের তাণ্ডবের পর বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলেও জানিয়ে আবহাওয়া অধিদফতর। তবে ইতোমধ্যেই দেশের পাঁচ জেলায় এখন পর্যন্ত নয়জনের প্রাণ কেড়েছে এই ঘূর্ণিঝড়। এরমধ্যে কুমিল্লায় একই পরিবারের তিনজন ছাড়াও ভোলা ও সিরাজগঞ্জে দুইজন করে মোট চারজনসহ নড়াইল ও বরগুনায় একজন করে মারা গেছেন।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে রাত ৩টা অবধি এই প্রাণহানির তথ্য মিলেছে।

এরমধ্যে রাত ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল এলাকায় গাছে পড়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- হেসাখাল খামারপাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন (২৮), তার স্ত্রী সাথী আক্তার (২৪) এবং তাদের চার বছরের শিশু কন্যা লিজা। নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান মেহেবুব এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে গাছচাপা পড়ে মনির স্বর্ণকার (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে ঝড়ের প্রভাবে উপরে পড়া গাছচাপায় গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মনিরকে মৃত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে ভোলার দৌলতখান পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরচাপায় বিবি খাদিজা (৮০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. জাকির হোসেন ও শশিভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া বরগুনায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গাছচাপায় আমেনা খাতুন নামে শতবর্ষী এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে জেলার সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে বসে ভাত খাচ্ছিলেন বৃদ্ধা আমেনা খাতুন। ওই সময় ঘরের পাশে থাকা একটি চাম্বল গাছ হঠাৎই উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে। এতে নিচে চাপা পড়েন ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে ওপরে পড়ে নড়াইলে মর্জিনা বেগম (৩২) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্বমোহন ও শিল্পপার্কের মাঝখানে থাকা যমুনা নদীর ক্যানেলে সিত্রাংয়ের প্রভাবে নৌকা ডুবে মা ও ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত নয়টার দিকে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- পূর্বমোহনপুর গ্রামের খোকনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৮) ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন (২)।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মোসাদ্দেক হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, রীতিমতো তাণ্ডব চালানোর পর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বলে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদফতর। এটি বর্তমানে নিম্নচাপ হিসেবে ঢাকা-কুমিল্লা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি

টিএই/আইএইচ