জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৪ অক্টোবর ২০২২, ০৯:১৬ এএম
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে যেকোনো সময় তা দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেজন্য উপকূলজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের আগেভাগে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তি উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিজেদের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রেখেছে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি।
উপকূলীয় ১৬ জেলাসহ সংস্থাটির সারাদেশে মোট ৭২ হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। এছাড়াও প্রতি জেলায় রেড ক্রিসেন্টের ইয়ুথ স্বেচ্ছাসেবী আছেন ২০০ জন করে।
সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব জেলার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় অতিবাহিত হতে পারে সেখানকার স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি ইয়ুথ টিমের সদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
একইসঙ্গে প্রতি জেলায় এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপদগ্রস্তদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার পর শুকনো খাবারসহ জরুরি যেসব জিনিসের প্রয়োজন হয় তা বরাদ্দ থেকে কেনার জন্যও বলা হয়েছে।
রেড ক্রিসেন্টের ডিজেস্টার রেসপন্স বিভাগের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানাতে গিয়ে এসব তথ্য দেন।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা আজকে (সোমবার) ভালো করে বোঝা যাবে। কারণ রোববার পর্যন্ত বাতাসের গতি কম ছিলো। সমুদ্রের সিগন্যালও কম ছিল। তবে আজকে বাড়তে পারে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি আছে।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, দেশের ১৬ উপকূলীয় এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি ইয়ুথ ভলান্টিয়ারদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তাবুসহ আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রও প্রস্তত রাখা হয়েছে। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে গভীর নিম্নচাপটি রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ায় চার নম্বর সমুদ্র সংকেত দিয়েছে।
এদিকে রোববার (২৩ অক্টোবর) দিনগত রাতে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দেশের অন্যান্য সমুদ্রবন্দরের তুলনায় পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকেই সবচেয়ে কাছে অর্থাৎ ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি রোববার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এসবের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এজন্য উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভোর রাত থেকে রাজধানীতে বৃষ্টি হচ্ছে।
সরকারের যে প্রস্তুতি
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষয়ক্ষতি রোধে সরকারের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানলে দেশের উপকূলের ৭৩০ কিলোমিটার এলাকায় এর প্রভাব থাকবে। কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় এর প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি বলেন, লঘুচাপ সৃষ্টির পর থেকেই আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোকে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আমাদের ভার্চুয়ালি মিটিং হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং হয়েছে। সিপিপিকে (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) প্রস্তুতি গ্রহণ ও সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আমরা প্রস্তুত রাখতে বলেছি। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে।
বিইউ/এমআর