images

জাতীয়

একই এলাকায় তিন ধরনের গ্যাস বিল!

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন

০৮ অক্টোবর ২০২২, ০১:৫৩ পিএম

একই নগরির আবাসিক এলাকায় বসবাস করেও গ্যাস কিনতে ভিন্ন ভিন্ন টাকা খরচ করতে হচ্ছে ভোক্তাদের। দুই চুলা গ্যাসের খরচ বাবদ প্রতিমাসে কেউ গুনছেন ১০৮০ টাকা, কেউ গুনছেন ৬০০-৮০০ টাকা আবার কাউকে গুনতে হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২৫০০। বিষয়টি আশ্চর্যজনক হলেও এমন বাস্তবতার কথা উঠে এসেছে ভোক্তাদের কাছ থেকে।

ঢাকা শহরে কেউ লাইনের গ্যাস ব্যবহার করেন কেউবা সিলিন্ডার গ্যাস। লাইনের গ্যাসের মধ্যে কারো রয়েছে প্রিপেইড মিটার সিস্টেম আবার কাউকে মাস শেষে নির্দিষ্ট একটা বিল (পোস্ট পেইড) পরিশোধ করতে হচ্ছে। এখন যারা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন তাদের প্রতিমাসে দেড় থেকে দুইটি ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে হয়। সে হিসেবে তার প্রতিমাসে খরচ পড়ে যায় ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। আবার যারা প্রতি মাসে দুই চুলার লাইনের গ্যাস ব্যবহার করেন তাদেরকে গুনতে হয় প্রতিমাসে ১০৮০ টাকা। আবার যেসব এলাকায় গ্যাস ব্যবহারে প্রিপেইড মিটার আছে তাদের অধিকাংশ ভোক্তারই সর্বোচ্চ গ্যাস বিল আসে ৭০০-৮০০ টাকা। গ্যাস ব্যবহারে ভিন্ন খরচে ভোক্তাদের মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া। 

রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় একটি ভবনের আট তলায় ভাড়া থাকেন জেসমিন আক্তার। তিনি এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করেন। একই বিল্ডিংয়ে পাঁচ তলা পর্যন্ত লাইনের গ্যাসের অনুমোদন আছে। জেসমিন আক্তারের রান্নার কাজের জন্য প্রতিমাসে দেড় থেকে দুইটা ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের প্রয়োজন হয়। শীতের সময় আরও বেশি লাগে। সে হিসেবে তাকে গুনতে হচ্ছে প্রায় ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। একই বিল্ডিংয়ে যারা পাঁচ তলা পর্যন্ত বসবাস করেন তাদেরকে প্রতিমাসে গুনতে হচ্ছে ১০৮০ টাকা। একই বিল্ডিংয়ে থেকে দুই ধরনের গ্যাস বিল খরচ করতে হচ্ছে তাদেরকে।

জেসমিন আক্তার বলেন, অদ্ভুত একটা ব্যাপার! আমরা একই বিল্ডিংয়ে বসবাস করি অথচ আমাদেরকে দ্বিগুণ টাকার গ্যাস কিনতে হচ্ছে। আজব শহরে বসবাস করছি আমরা।

আবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস ব্যবহারে প্রিপেড মিটার রয়েছে। তাদের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিয়মিত বিলের থেকে প্রিপেইড মিটারে গ্যাস বিল বেশ কম আসছে।

gas

রাজধানীর মিরপুর এলাকার শহিদুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে এক জায়গায় ভাড়া থাকতাম সেখানে গ্যাস বিল দিতে হতো ৯৭৫ টাকা। যা বর্তমানে ১০৮০ টাকা। এখন আমাদের সর্বোচ্চ বিল আসে ৬০০-৭০০ টাকা। এর বেশি কখনো আসে না। গ্রাহকদের অভিযোগ, কম গ্যাস সরবরাহ করে বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য তিতাস ইচ্ছাকৃতভাবে পিপেইড মিটার পরিষেবা সম্প্রসারণে ধীরগতিতে এগোচ্ছে। তবে তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, পোস্ট পেইড বা বার্নার হিসেবে গ্রাহকরা যখন গ্যাস ব্যবহার করেন তখন অনেক অপচয় করেন। কিন্তু প্রিপেইড হলে তারা সাশ্রয়ী আচরণ করেন। তাই সব শ্রেণির গ্যাস গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার অংশ হিসেবে দেশে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার সংযোজন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর কিছু এলাকায় লাইনে ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছেন না অনেক গ্রাহক। ফলে লাইনের গ্যাস ও সিলিন্ডার দুইটাই রাখতে হয় তাদেরকে। এতে তাদের গ্যাসবিল বাবদ দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে।

রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মামুন অভিযোগ করেন, ‘প্রতি মাসেই তিতাস ফ্রি ফ্রি গ্যাস বিল নিয়ে যাচ্ছে। গ্যাস তো থাকেই না। প্রতি মাসে গ্যাস বিলও দিতে হচ্ছে আবার সিলিন্ডারও কিনতে হচ্ছে। অথচ কোনো সমাধান নেই! আজব দেশে বসবাস করছি।’

লাইনের গ্যাস, সিলিন্ডার ও মিটার নিয়ে বাড়িওয়ালাদেরকেও ভাড়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বাড়িতে লাইনের গ্যাস থাকলে ভাড়া একটু বেশি পাওয়া যায়। আবার লাইনের গ্যাস না থাকলে ভাড়া কম বলে ভাড়াটিয়ারা। আবার একই বিল্ডিংয়ে পুরোটাতে লাইনের গ্যাস অনুমোদন না থাকলে আরেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় তাদের।

lpg

পুরো রাজধানীতেই গ্যাস বিল দিতে গিয়ে এই ধরনের ‘বৈষম্যের শিকার’ গ্রাহকরা। এটা শুধু রাজধানীতেই নয়। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরেও বা অনেক এলাকাতেই এই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নাগরিক সমাজের নেতারা।

এ বিষয়ে সাধারণ নাগরিক সমাজের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, কেউ সারা মাসে পাঁচ-ছয়শ টাকায় পার পেয়ে যাবে আবার কারো ব্যয় হবে দুই হাজার টাকা এটা চরম বৈষম্য। সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের সমান অধিকার। অথচ একই বিল্ডিংয়ের দুই জন দুই ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। কেউ কম সুবিধা পাচ্ছে কেউ বেশি। অথচ ভর্তুকির টাকা সবার পকেট থেকেই যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এটা সরকারের সঠিক নীতিমালার কারণে এমন হচ্ছে। আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলাম যে প্রত্যেক বিল্ডিংয়ের নিচে গ্যাসের জন্য একটা করে সেন্ট্রাল হাউজ করা হোক। যেখানে সরাসরি কোম্পানি তাদেরকে গাড়িতে করে গ্যাস সরবরাহ করবে। সেখানে ওই বিল্ডিংয়ে সব গ্রাহকদের জন্য আলাদা আলাদা সিলিন্ডার লাগবে না। ফলে খরচটা অনেক কমে আসত। এগুলোর জন্য যে সুষ্ঠু পরিকল্পনার দরকার সেটা নেওয়া হচ্ছে না। আসলে এখন পুরো জ্বালানি সেক্টরেই বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে।

দেশের ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রিপেইড বা লাইনের গ্যাসের সাথে যারা সিলিন্ডার ব্যবহার করেন তাদের মাসিক যে কস্ট যাতে অনেক তারতম্য রয়েছে। যারা সিলিন্ডার ব্যবহার করেন তাদের দেখা যাচ্ছে যে তাদেরকে গ্যাস কম দেওয়া হচ্ছে কিন্তু তারা সেটা বুঝতে পারছেন না। এতে তদের বেশি সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। পোস্টপেইড গ্যাস যদি প্রিপেইড মিটার করা হয় তবে গ্যাস অপচয় কম হবে। আমি মনে করি সব মিলে এটার একটা সমন্বয় থাকা উচিত।

টিএই/এএস