বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
০২ মার্চ ২০২২, ০৮:১০ এএম
আজ ২ মার্চ জাতীয় পতাকা উত্তোলন দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ.স.ম আবদুর রব।
তারপরের দিন অর্থাৎ ৩ মার্চ পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্যে দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাহজাহান সিরাজ। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম তার ধানমন্ডির বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ। আর বিদেশের মাটিতে সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল৷
১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ের লাভের পর পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল যে ছয় দফার বাস্তবায়ন এবার হয়েই যাবে হয়ত। ১৯৭১ এর ১২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার দুই দফা আলোচনা করলেন।
আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আলোচনা সন্তোষজনক। প্রেসিডেন্ট শিগগিরই ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করতে সম্মত হয়েছেন।’ ইয়াহিয়া খান বললেন, ‘শেখ মুজিব আমার সঙ্গে যে কথা বলেছেন, যে আলোচনা তুলেছেন সেসব যৌক্তিক ও সঠিক।’
কিন্তু ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর বাসভবনে গোপন বৈঠকে মিলিত হলেন পাকিস্তান আর্মির জেনারেলদের সঙ্গে। এরপর জানুয়ারির শেষ দিকে দলের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় এলেন। আওয়ামী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় পরিষদের বৈঠকে ছয় দফার ওপর শাসনতন্ত্র তৈরির কথা বললেন। কিন্তু, ভুট্টো তখন আরও আলোচনার কথা বলেছিলেন। ভুট্টো তখন চেয়েছিলেন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে হোক।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করলেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, আওয়ামী লীগ তাদের ৬ দফার বিষয়ে আপস বা পরিবর্তন না করলে ভুট্টো অধিবেশনে যোগদানের বিরোধিতা করলেন। এরপর ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনার পর ভুট্টো জানালেন তার দেওয়া শর্ত না মানলে তিনি কোনভাবেই অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন না এবং বললেন অধিবেশন বসলে সে অধিবেশন কশাইখানায় পরিণত হবে।
এরপর পহেলা মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করলেন ইয়াহিয়া খান। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়। প্রতিবাদে দুই থেকে ৩ মার্চ দুপুর ২টা পর্যন্ত হলতালের ঘোষণা দেয়া হয়।
২ মার্চ হরতালের দিন বিক্ষোভ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণের বটতলায়। সেদিন সকাল থেকেই দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ ঢাকার রাজপথে অবস্থান নেয়৷ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জুলুম, নিগ্রহ, শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে তৎকালীন ডাকসু নেতাদের উদ্যোগের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ জড়ো হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। বেলা ১১টার দিকে বটতলায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ.স.ম আব্দুর রব। এমন সময় ছাত্রলীগের নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে মঞ্চে এলে সে পতাকা উত্তোলন করেন আব্দুর রব৷
রব ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন ডাকসুর তৎকালীন জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজ এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী। সেদিন দুপুর ও রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়েছিল।
একেবি