নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ আগস্ট ২০২২, ১২:০৭ পিএম
শামসুল আলম সবুজ। প্রতিদিন মতিঝিলের কর্মস্থলে শ্যামলী থেকে বাসেই যাতায়াত করেন। শনিবার সকালেও অফিস যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন তিনি। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেও বাস পাচ্ছিলেন না। মাঝেমধ্যে দু-একটি বাস এলেও সেগুলোতে যাত্রীতে ঠাসা। উপায় না পেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা খুঁজছিলেন তিনি। কিন্তু অটোরিকশার ভাড়া শুনে চমকে ওঠেন তিনি। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে অটোরিকশা ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আজ সেই ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। অফিসের সময় হয়ে যাওয়ায় উপায় না পেয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়েই অটোরিকশায় চড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
গতরাতে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকহারে বাড়ানোর পর সকাল থেকে রাজধানীতে বাস কমে গেছে। এতে কর্মজীবীসহ সাধারণ মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। আর বাস সংকটের এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন সিএনজি অটোচালক। পিছিয়ে নেই রিকশা চালকরাও। তারও সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত দাম চাচ্ছেন।
শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা শাহানা বেগম বাংলামোটরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। শনিবার সকালে শ্যামলী শিশুমেলার সামনে এক ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করেও তিনি বাস পাননি। ফলে অফিসের পথ ধরতে হয়েছে রিকশাযোগে।
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে শাহানা বলেন, 'বাস ভাড়া ১৫ টাকা। আজ বাস কম। যাও আসে তাতে ওঠার জায়গা নাই। বাধ্য হয়ে রিকশায় যেতে হচ্ছে।'
শ্যামলী থেকে বাংলা মোটর রিকশা ভাড়া ১২০ থেকে দেড়শো টাকা। তবে আজ শাহানাকে সে ভাড়া গুনতে হয়েছে ১৮০ টাকা।
আবার স্বল্প দূরত্ব যেতে অনাগ্রহী রিকশাচালকরা। দ্বিগুণ ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে ছুটছেন অফিসপাড়ায়। বাড়তি ভাড়ার কারণ জানতে চাইলে এক রিকশাচালক বলেন, 'রিকশা ভাড়ার ঠিক নাই। সকাল টাইমে ভাড়া বেশিই হয়।'
শুক্রবার রাতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন ও অকটেনের দাম বাড়ানো হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ডিজেলের দাম ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা লিটার, কেরোসিনের দাম ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৪৬ টাকা। এত দিন অকটেন ৮৯ টাকা লিটার বিক্রি হতো। এখন তা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হবে। রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরই রাজধানীতে বাস সংকট দেখা দেয়। রাজধানীতে যখন গণপরিবহন সংকট তখন এর সুবিধা ১৬ আনাই নিচ্ছেন নগরীর রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা। এই দুই পরিবহন সংশ্লিষ্ট কোনো কিছু মূল্য বৃদ্ধি না হলেও যাত্রীদের অসময়কে পুঁজি করে শেষ পেরেকটা তারাই মারছেন।
মিরপুর রোডে দেখা গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম। দেড়শো টাকার ভাড়া আড়াইশো টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। আর সিএনজি চালকরা ভাড়া হাঁকছেন দুই থেকে তিনগুণ।
বাড়তি ভাড়ার কারণ জানতে চাইলে অটোরিকশা চালক মো. মিলন ঢাকা মেইলকে বলেন, 'এগুলা কইয়া লাভ নাই। রাস্তায় গাড়ি কম। ভাড়া তো বেশি হইবোই।'
কারই/এমআর