images

জাতীয়

অর্ধেকের বেশি বেড়েছে বাস ভাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ আগস্ট ২০২২, ১১:১৯ এএম

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর রাজধানীতে কমেছে গণপরিবহন চলাচল। তবে যেসব পরিবহন চলছে সেগুলোতে চাওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। কোনো বাসে প্রতি চেকে ৫ টাকা আবার কোনো বাসে আগের ভাড়ার অর্ধেকের বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। একইসঙ্গে ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায়ও হচ্ছে। এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গণপরিবহনের ভাড়া দ্রুত সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছেন মালিকরা। তা না হলে যাত্রীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায় বলে আশঙ্কা করছেন তারা। পরিবহন নেতারা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনের ভাড়া সমন্বয় না হলে সড়কে তার প্রভাব পড়বে।  

শনিবার (৬ আগস্ট) সকালে খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, মৌচাক এলাকা ঘুরে  দেখা গেছে, বাসের জন্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। প্রতিটি মোড়ে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঝেমধ্যে দু-একটি বাস এলেও সেগুলোতে যাত্রীতে ঠাসা। দুএকজন নেমে গেলে সেই শূন্যস্থান পূরণে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। এতে দুএকজনের বাসে ঠাঁই হলেও বাকিরা হতাশ হয়ে পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকে বাসে উঠতে পারবেন না এমন আশঙ্কা থেকে বিকল্প উপায়ে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।

তবে বেড়েছে বাস ভাড়া। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসে প্রতি চেকেই ৫ টাকা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ যেখানে ভাড়া ছিল ১০ টাকা এখন তা হয়েছে ১৫ টাকা, ২০ টাকার ভাড়া হয়েছে ৩০ টাকা। আবার কোনো কোনো বাসে তার থেকেও বেশি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

খিলগাঁও থেকে সাতরাস্তা এসেছেন হাসনাত কাদির। তিনি বলেন, প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষার পর বাসে ওঠতে পেরেছি। আগে ভাড়া ছিল ১৭ টাকা আজ নিয়েছে ২৫ টাকা। 

টেকনিক্যাল মোড়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে ফার্মগেটে এসেছে সাব্বির আহমদ। তিনি বলেন, আজ তানজিল পরিবহনে ২৫ টাকা দিয়ে আসলাম। আগে এখানে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। একই সঙ্গে গুলিস্থানের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা যা আগে ছিল ২৫ টাকা।

মালিবাগ রেলগেটে কথা হলে রাইদা পরিবহনের কন্টাক্টর জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতি চেকেই ৫ টাকা করে ভাড়া বাড়িয়েছি। আগে যেখানে ১০ টাকা আজ থেকে সেখানে ১৫ টাকা হবে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে মনে করছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে। পরিবহন খাতে অস্থিরতা দেখা দেবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত তেলের দাম যে পরিমাণ বাড়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি বাড়ে বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন ভাড়া। পণ্য পরিবহন ভাড়াও ইচ্ছেমত বাড়িয়ে দেয় ট্রাক-কভার্ডভ্যান মালিকেরা। 

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা একচেটিয়াভাবে ভাড়া যে পরিমাণ বাড়ায় গণপরিবহনের তার কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া গণপরিবহনে আদায় হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা বা বর্ধিত ভাড়া আদায় বন্ধে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

একাধিক বাস মালিক জানান, যে হারে লিটারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, সে হারে ভাড়া না বাড়ালে গাড়ি রাস্তায় নামানো সম্ভব নয়। লস দিয়ে কেউ সড়কে গাড়ি নামাবে না। ভাড়া সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত যদি বাসে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করা হয়, তাহলে সমস্যা হবে। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সরকারকে দ্রুততম সময়ে ভাড়ার বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। 

মহাখালী বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, সরকার যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা চাই তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি ভাড়া পুর্নির্ধারণ হোক। আমরা বাস মালিকদের বলেছি তারা যেন তাদের গাড়ি রাস্তায় নামায়। 

এসএএস/এএস