জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৬ আগস্ট ২০২২, ১২:৪৮ এএম
তেলের দাম বাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। কিন্তু শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতেই যে দাম বাড়ানো হবে এমনটা জানা ছিল না কারও। কিন্তু সাপ্তাহিক ছুটির দিন মধ্যরাতে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিলো সরকার। সর্বনিম্ন ৩৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা করছেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেছে। বলা হয়েছে, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে নতুন এই দর কার্যকর হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী— লিটার প্রতি অকটেন ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা। বাড়লো ৪৬ টাকা। পেট্রোল ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা। বাড়লো ৪৪ টাকা। ডিজেল ৮০ থেকে ১১৪ টাকা। বাড়লো ৩৪ টাকা। কেরোসিন ৮০ থেকে ১১৪ টাকা। বাড়লো ৩৪ টাকা।
এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেউ কেউ বলছেন, ছুটির দিনে মধ্য রাতে জ্বালানি তেলের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক।
অনেকে আবার কিছৃটা মজা করে বলছেন, মাথা পিছু আয় বেড়েছে, উন্নয়নের রোল মডেল আমরা। সেখানে দাম তো কিছুটা বাড়বেই।
কেউ বা বলছেন, প্রতিবাদ না হওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
নাজমুস সালেহী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তেলের দামবৃদ্ধি অবশ্যই যৌক্তিক। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। উন্নয়নের রোল মডেল আমার দেশ এখন উন্নত দেশের খেতাব পেতে যাচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও শতভাগ বিদ্যুতের দেশে এটা খুবই স্বাভাবিক। মানুষ এখন মিনিকেট চালের ভাত খায়, দেশে কোনো গরিব নেই। এমন দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরও আগেই বাড়ানো উচিত ছিল। এতদিন পরে বাড়ানোতে বেশ অবাক হচ্ছি।’
সাংবাদিক আমীন আল রশীদ লিখেছেন, “ডিজেলের দাম এক লাফে লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা আর পেট্রোলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই অজুহাতে (উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া) নিত্যপণ্যের দাম আরও একদফা বাড়বে। হে মধ্যবিত্ত, ‘হাওয়া’ ও ‘দখিন হাওয়া’ ছেড়ে এবার বেঁচে থাকার সংগ্রাম ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরেক দফা আহা উহুর প্রস্তুতি নিন। কিছু রসিকতাও। রসিকতা আর আহা উহু ছাড়া আমাদিগের কী করার আছে?”
কাওসার আজম নামে একজন লিখেছেন, ‘এখন প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও প্রতি লিটার পেট্রোল ১৩০ টাকায় কিনতে হবে। দাম বেড়েছে প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪, কেরোসিনে ৩৪, অকটেনে ৪৬, পেট্রোলে ৪৪ টাকা। মানুষ যাবে কোথায়?’
ফাহিম মুনায়েম লিখেছেন, ‘আমরা তো সব কিছুই মেনে নেই। প্রতিবাদ তো ভুলেই গেছি। চামচামিতে ভরে গেছে। অযৌক্তিক বলে কি লাভ হবে। কমাবে না, তারা তেলের দাম যখন কমেছে তখনও বাড়তি দামে বিক্রি করেছে। তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে যদি রাতেই রাস্তায় নামতো বা কাল সাধারণ জনগণ প্রতিবাদ করতো তা হলো বলতাম ঠিক না।’
রাশিদুল হাসান লিখেছেন, ‘হ্যাঁ দাম আরও বাড়ানো উচিত। এত কম দামে কিনলে তো আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবো না।’
আমানুর রহমান রনি তেলের দামবৃদ্ধির প্রভাব কোথায় কোথায় পড়বে তা নিয়ে সংশয়ের কথা লিখে পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, তেলের দাম বাড়লে পরিবহনের ভাড়া বাড়বে না? করোনায় যা বাড়াইছিল, সেই ভাড়াতেই চলছে গাড়ি, এর সঙ্গে তেলের দামের বৃদ্ধির কারণে ফের পরিবহনের ভাড়া বাড়বে। অর্থাৎ বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে বাড়তি ভাড়া যোগ হবে। জীবনে জিকির করার অবস্থা তৈরি হলো আর কি।’
নৌশিন মৌলি কিছুটা মজা করে লিখেছেন, এরপরও কি তেল মারা বন্ধ হবে?
আর মুজাহিদ শুভ তেলের দাম বাড়ার কারণে তৈলবিহীন সাইকেল কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তেলের দাম বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে আরিফুর রহমান লিখেছেন, সবকিছুতেই সয়ে যাওয়া কিংবা মানিয়ে নেওয়া-সবাই শিখে গেছে। ব্যাপার না।
দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিগত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
বিইউ/এইউ