নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজায় লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছে। শ্যামলী থেকে কলাবাগান, আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট হয়ে কারওয়ান বাজার, মূল সড়ক পেরিয়ে গলিপথ ও এলাকার বিভিন্ন খেলার মাঠ ছিল মানুষে পরিপূর্ণ। সবাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন, কখন মাইকে নামাজের তাকবিরের ধ্বনি ভেসে আসবে।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোর থেকে তীব্র শীতের বাধা পেরিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে ছুটে এসেছেন লাখ লাখ মানুষ।
সরেজমিন দেখা যায়, খালেদা জিয়াকে শেষবারের মতো বিদায় দিতে দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নানা শ্রেণী–পেশার মানুষ তীব্র শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এসে জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল ১০টার মধ্যে দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকা মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করতে মানুষ আসতে থাকে। দুপুর ১১টার দিকে সংসদ ভবনের পাশে মিরপুর সড়কে ধানমন্ডি ২৭ থেকে কলেজগেট পর্যন্ত মূল সড়কে মানুষের ভিড় ছিল। এ সড়কের পাশাপাশি খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেটের মূল সড়ক ধরে আগারগাঁও পর্যন্ত মানুষের জমায়েত হয়। বেলা ১২টার পরে দক্ষিণ প্লাজা কিংবা মানিক মিয়া এভিনিউতে আর কেউ প্রবেশ করতে পারেননি। কয়েক লাখ মানুষের ভিড়ে পদদলিত হয়ে নিহত ও আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
এদিকে, বেগম খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা দুপুর ২টায় হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন দেশের অতিথি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিকেল ৩টায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে বের হওয়ার সময় পদদলিত হয়ে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
কুমিল্লা থেকে আসা জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে গেছি। গুলিস্তানে আসার পর দেখি দলে দলে মানুষ হেঁটে প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে সংসদ ভবনের দিকে রওনা হয়েছে। এত মানুষ হেঁটে যাচ্ছে দেখে আমিও হাঁটা শুরু করি। নিউমার্কেট এলাকায় পৌঁছে দেখি মানুষের এমন ভিড়, রাস্তায় হাঁটার মতো জায়গা নেই। শেষ পর্যন্ত ভিড় ঠেলে ঠেলে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পর্যন্ত গিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে জানাজার নামাজ আদায় করেছি। খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিয়ে ঐতিহাসিক এক অধ্যায়ের সাক্ষী হতে পেরেছি। তবে তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়ে আমাদের দেশকে অভিভাবকহীন করে গেলেন। তার শূন্যতা বাংলাদেশ কখনো পূরণ করতে পারবে না।
বরিশালের মুলাদী থেকে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজায় দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল ও মতের নেতাকর্মীসহ সব শ্রেণী–পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। এমন একটি জানাজা দেখলাম, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। গতকাল বরিশাল থেকে রওনা হওয়ার সময় গাড়ি পাচ্ছিলাম না, কোনো গাড়ি ফাঁকা দেখিনি। এত মানুষ এসেছে। শীতের মধ্যে বহু কষ্টে জানাজায় অংশ নিতে এসে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছি। এমন একজন দেশপ্রেমিকের জানাজায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম দেখে মনে হয়েছে, সত্যিকারের এক দেশপ্রেমিককে বাংলাদেশ হারিয়েছে। তার মতো একজন দেশপ্রেমিক হারিয়ে এ দেশের রাজনৈতিক শূন্যতা আরও গভীর হলো। এই শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা ওবায়দুর রহমান মিজান বলেন, গতকাল সকালে ঢাকায় রওনা হয়ে রাতে ঢাকায় পৌঁছেছি। এরপর এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে নামাজে জানাজায় অংশ নিতে এসেছি। একজন দেশপ্রেমিক খালেদা জিয়াকে হারিয়ে মনে হচ্ছে আমরা দেশের বড় একটি সম্পদ হারিয়েছি। দেশের সঙ্কটপূর্ণ সময়ে তাকে হারিয়ে আরও বড় সঙ্কট তৈরি হলো। তার অভাব পূরণ করা আর সম্ভব নয়। আমাদের কষ্ট হয়েছে ঠিকই, তবে আমরা তার রূহের মাগফিরাত কামনা করি।
জহিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম কিংবা ওবায়দুর রহমানের মতো লাখ লাখ মানুষ সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় জমায়েত হয়ে খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন। অনেকে পদদলিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেও ঐতিহাসিক এই জানাজায় অংশ নিয়ে তারা ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন। তবে লাখ লাখ মানুষ জানাজায় অংশ নিতে এসে আহত ও নিহতদের খোঁজ রাখার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারী মুসল্লিরা।
একেএস/