মো. মেহেদী হাসান হাসিব
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৭ পিএম
নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে আলোচনার বাইরে থাকা যেন এ বছরও সম্ভব হয়নি। সংবিধানিক দায়িত্ব পালনের প্রতিটি ধাপেই কমিশনের সিদ্ধান্ত, ঘোষণা ও কার্যক্রম ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক, প্রশ্ন ও সমালোচনা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি, আচরণবিধি বাস্তবায়ন, ভোটের সময়সূচি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত—সবকিছু মিলিয়ে পুরো বছরজুড়েই ইসি ছিল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রে। এসব আলো-সমালোচনার মধ্য দিয়েই শেষ হলো নির্বাচন কমিশনের আরেকটি ঘটনাবহুল বছর।
২০২৫ সাল পুরো এক বছর নির্বাচন কমিশন কেমন কাটিয়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঢাকা মেইলকে জানান, এই বছরের জার্নি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে আমি বলব যে ভালো-মন্দ মিলিয়েও আমরা সফল হয়েছি। আর আগামী বছর নিয়ে আমরা আরও আশাবাদী যে নির্বাচন সঠিক হবে, সুন্দর হবে এবং সেটা মানুষের নির্বাচন হবে।
আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, অতীতে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে যে একটা আশঙ্কা মানুষের মনে স্থান পেয়েছে, সেটা আশা করছি কেটে যাবে। ভালো নির্বাচন হবে, মানুষের গ্রহণযোগ্য হবে আর যদি এ নির্বাচন আমরা গ্রহণযোগ্য করতে পারি, তাহলে আমরা বলব সম্পূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পেরেছি।
হাদির ওপর গুলি: বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও পরে ব্যাখ্যা প্রদান
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করলে সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। এরপর এ বক্তব্যের জন্য ব্যাখ্যা দিয়ে কমিশন জানায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয় মূলত তাঁর বক্তব্যে বোঝাতে চেয়েছেন যে, ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলা আসন্ন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। কমিশন শরিফ ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও আইন সংশোধন
প্রথমবারের মতো এক বছরে তিনবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের ২ মার্চ প্রথম ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর দ্বিতীয় ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় গত ৩১ আগস্ট। আর সবশেষ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৮ নভেম্বর।
অন্যদিকে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ৩ ধারার উপধারা (জ) এবং ১১ ধারার ১ উপধারা এমনভাবে সংশোধন করা হয়, যাতে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন অনুযায়ী ভোটার যোগ্যতা অর্জনের তারিখ এবং তালিকা সংশোধনের সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে।
এ আইনের ধারা ৩(জ): ভোটার যোগ্যতা অর্জনের তারিখ হিসেবে ১ জানুয়ারির পরিবর্তে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত অন্য তারিখ নির্ধারণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
ধারা ১১(১): ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ ভোটার তালিকা প্রকাশের সময়সীমা ছাড়াও কমিশনের বিবেচনায় ‘উপযুক্ত সময়’ প্রকাশ করার বিধান আনা হয়েছে।
সবশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৭৭ লাখ। যারা এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
ফেরারি আসামিকে ভোটে অযোগ্য করে আরপিও সংশোধন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আদালতের দৃষ্টিতে ফেরারি আসামিকে ভোটে অযোগ্য করতে সংশোধন করেছে ইসি। এছাড়া আরও অনেক সংশোধন আনার ফলে বেড়েছে সংস্থাটির কর্তৃত্ব।
আনা হয়েছে যত সংশোধন—আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও কোস্টগার্ড যুক্ত। ইভিএমের সব প্রভিশন বাতিল। কর্মকর্তাদের অবহেলায় শাস্তি সুনির্দিষ্ট; ৩ দিনে তদন্ত শেষ করে ইসিকে জানাতে হবে। ‘না’ ভোট: শুধু একক প্রার্থীর আসনে প্রযোজ্য; বিনা ভোটে নির্বাচিত নয়। পর্যবেক্ষক-সংবাদকর্মী: অনুমতিপ্রাপ্তরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। পুরো বা আংশিক আসনে বাতিল/স্থগিতের ক্ষমতা পুনর্বহাল। আচরণবিধি ভঙ্গ: শাস্তির বিধান যুক্ত। ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারবেন সংবাদকর্মীরা। সমভোট হলে লটারির পরিবর্তে পুনঃনির্বাচন হবে। প্রচারে শুধু ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলো ব্যবহার করা যাবে; অন্যান্য আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ। ব্যয়ের অডিট আরও কঠোরভাবে নিরীক্ষা করা হবে। দলীয় অনুদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয় ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা; ব্যাংক ও আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক। পুলিশ-প্রশাসনের বদলিতে রেঞ্জ ডিআইজি অন্তর্ভুক্ত। এআই-ভিত্তিক মিথ্যাচার: প্রার্থী, দল ও মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। দলীয় নিবন্ধন নাকচ হলে ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত কারণ জানাতে হবে। দলের কার্যক্রম স্থগিত/নিষিদ্ধ হলে নিবন্ধনও স্থগিতের বিধান। হলফনামায় মিথ্যা প্রদানে নির্বাচিত হওয়ার পরও ৫ বছরের মধ্যে প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিল ও এমপি পদ খারিজ হতে পারে। বাড়ানো হয়েছে প্রিসাইডিং অফিসারের ক্ষমতা, তবে ভোটে প্রভাব খাটালে শাস্তির বিধানও রয়েছে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়ে বিতর্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর প্রেক্ষিতে ১৪৩টি দলের নিবন্ধন আবেদন জমা হয়। এরপর প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে কোনো দল উত্তীর্ণ না হলে শর্ত পূরণে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়। এতে ৪৩টি দল শর্ত পূরণের জন্য কাগজ জমা দেয়, আর বাকি দলগুলোর নিবন্ধন আবেদন বাতিল করে দেয় ইসি।
মাঠপর্যায়ের তদন্ত শেষে এনসিপি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দাবি-আপত্তি আহ্বান করে সংস্থাটি। পরবর্তীতে এনসিপি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) দাবি-আপত্তি না আসায় নিবন্ধন চূড়ান্ত করে ইসি। আর বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টির কার্যক্রম আরও যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। এছাড়া কয়েকটি দলের মাঠ তদন্তের পরও উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করে সংস্থাটি।
অন্যদিকে ধাপে ধাপে যাচাই ও পুনর্বিবেচনার আবেদন আমলে নিয়ে আমজনতার দল, জনতার দল ও বাংলাদেশ সমঅধিকার পার্টিকে (বিইপি) নিবন্ধন দেওয়া হয়। আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ নেজামি ইসলামি পার্টি।
১২৫ ঘণ্টা অনশনে নিবন্ধন পায় আমজনতার দল
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধনের আবেদন করেও প্রথম ধাপে নিবন্ধন না পেলেও টানা ১২৫ ঘণ্টা অনশন করে নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পায় তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন ‘আমজনতার দল’।
নতুন ছয়টি দল নিয়ে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৯। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হয়েছে। বাতিল হয়েছে পিডিপি, ফ্রিডম পার্টি ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন।
এনসিপির ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে বিতর্ক
দল নিবন্ধন পেলেও ‘শাপলা’ প্রতীক ছাড়া নিবন্ধন না নেওয়ার ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এরপর কমিশন থেকে একাধিকবার এনসিপিকে চিঠি দিয়ে সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকা থেকে দলের প্রতীক পছন্দ করতে বলা হলেও ‘শাপলা’ ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক নেবে না বলে জানায় দলটি। তবে পরবর্তীতে বিধিমালা সংশোধন করে প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করা হলে তা গ্রহণ করে তরুণদের এ দল।
প্রচারে পোস্টার নিষিদ্ধ করে আচরণবিধিমালা প্রণয়ন
প্রথমবারের মতো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালায় যুক্ত করে তা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ জরিমানা ধরা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে প্রার্থিতা বাতিলের বিধানই রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া অপব্যবহার রোধে কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সংক্রান্ত নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। সব প্রার্থীর ইশতেহার একই প্ল্যাটফর্মে প্রকাশের নিয়ম থাকছে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে, যা নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে। আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে দলের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাও নেবে ইসি।
আচরণবিধিমালা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “প্রার্থীর প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না; এবার যুক্ত করা হয়েছে। পোস্টার ব্যবহার বন্ধে সংস্কার কমিশনেরও একটি প্রস্তাব ছিল। আমরাও একমত। আর ব্যানার ও ফেস্টুনের ব্যবহার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। ফলে তারা প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতে পারবেন না।”
প্রচারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে জোর দেওয়ার তথ্য দিয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “ভোটার স্লিপের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে যে বিধিনিষেধ ছিল, এবার একটু শিথিল মনোভাব দেখানো হয়েছে।”
সানাউল্লাহ জানান, মাইকে প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। প্রচারণার সময় থাকছে তিন সপ্তাহ। টিভিতে সংলাপের সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি বা সদস্য পদে থাকলে পদত্যাগ করতে হবে। বিধিমালা লঙ্ঘনে যে স্বাভাবিক শাস্তি ছিল—ছয় মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা—এবার জরিমানা সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার প্রস্তাব রয়েছে।
সব প্রার্থীকে এক মঞ্চে রাখার বিষয়ে সানাউল্লাহ বলেন, “কমন প্ল্যাটফর্ম বলতে আমাদের যেসব রিটার্নিং অফিসার রয়েছেন, সংশ্লিষ্ট আসনে তিনি সব প্রার্থীকে নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে একদিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।”
সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র ৪২,৭৬১টি; ভোটকক্ষ ২,৪৪,৬৪৯টি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র স্থাপনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যার মধ্যে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি। তবে গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একই দিনে হওয়ায় গোপন বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে সংস্থাটি।
ভোটে সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিক নীতিমালা প্রণয়ন
নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ভোটকক্ষে প্রবেশের আগে প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করাসহ কয়েকটি বিষয়ে সাংবাদিকরা আপত্তি তুললে তা নমনীয় করার আশ্বাস দেয় নির্বাচন কমিশন।
রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ ইসির
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার চার ধাপে নিবন্ধিত ৪৯টি দলকে আমন্ত্রণ জানালে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ ৩৪টি দল সংলাপে অংশ নেয়। ৫ আগস্টের পর জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের জোট শরিকে থাকা ছয়টি দল নিয়ে বর্তমানে রাজনীতির মাঠে চলছে সমালোচনা ও বিতর্ক। এ সমালোচনা ও বিতর্ক থেকে ইসিকে দূরে রাখতেই ৭টি দলকে সংলাপে না ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
যে সাত দল এবার আমন্ত্রণ পায়নি, সেগুলো হলো—জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় পার্টি-জাপা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন।
অন্যদিকে সংলাপের সময় শেষ হওয়ার পর নিবন্ধন পাওয়া ৫টি দল এতে অংশ নিতে পারেনি। এছাড়া নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, নারী নেত্রী, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে আলোচনা করেছে সংস্থাটি। তবে জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে সংলাপ করার কথা থাকলেও তা করতে পারেনি ইসি। এসব সংলাপে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), আচরণবিধি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রবাসীদের জন্য আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট
প্রথমবারের মতো প্রবাসী ও ভোটের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েদিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। যেখানে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করলে পোস্টাল ব্যালট ভোটারের কাছে ডাক বিভাগের মাধ্যমে পৌঁছে দেবে নির্বাচন কমিশন, এরপর তা আবার ফেরতও আনা হবে। এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এ সংক্রান্ত আইনও যুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য এতে নিবন্ধন করেছেন।
সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের প্রস্তুতি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব প্রস্তুতি শেষ করে ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে দুই ভোট একসঙ্গে হওয়ায় অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো, ভোট গ্রহণের জন্য এক ঘণ্টা সময় বৃদ্ধি এবং গোপন বুথের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা ছাড়া অতিরিক্ত কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়নি নির্বাচন কমিশনকে।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে প্রতীক বরাদ্দ দেবেন ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। প্রচার চালানো যাবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত।
২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর দায়িত্ব নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। অবসরপ্রাপ্ত এই সচিবের নেতৃত্বাধীন এই কমিশনে যোগ দেন আরও চার কমিশনার-সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাছউদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সিইসি হিসেবে বিএনপি যে দুজনের নাম প্রস্তাব করেছিল, তার মধ্যে এ এম এম নাসির উদ্দীনের নাম ছিল। তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বিসিএস ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।
এমএইচএইচ