নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ ছাড়া দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে 'টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং নৈতিক শিক্ষার প্রসারে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত রংপুর জেলা কর্মশালা-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৬ষ্ঠ পর্যায় প্রকল্পের অধীনে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এ কর্মশালা আয়োজন করে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সামাজিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যের ওপর। এদেশে নানা ধর্মের মানুষের বসবাস। সবাইকে নিয়েই আমাদেরকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এখানে যদি অস্থিরতা কিংবা অসন্তোষ থাকে তাহলে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি সকলের মনকে উদার ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করার অনুরোধ জানান।
ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করাকে জঘন্য কাজ উল্লেখ করে ড. খালিদ বলেন, এদেশে বহুদিন ধরে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ, কটূক্তি, বক্রোক্তি কিংবা ব্যঙ্গ করার অসুস্থ মানসিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা হীন প্রকৃতির মানুষেরাই করে থাকে। ধর্ম অবমাননার অজুহাতে সহিংস ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। ধর্ম অবমাননা যেমন আইনের চোখে অপরাধ তেমনি ব্যক্তি বিশেষের অপরাধে তাকে কিংবা সম্প্রদায়কে বেআইনিভাবে শাস্তি দেয়া আরো বেশি অপরাধ।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা অনেকেই আইন হাতে তুলে নিই। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে চায় না। আমরা মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলি। এমনকি মেরে আগুনে পুড়িয়েও ফেলি। কবর থেকে তুলে এনেও পুড়িয়ে দিই। বর্বরতারও একটি সীমা থাকা প্রয়োজন। কেউ অপরাধ করলে তার জন্য আইন-আদালত আছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প আমাদের সুকুমার বৃত্তিকে যেন বিনষ্ট করে না দেয়।তিনি সকলকে মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানান। এছাড়া, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে সকলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
প্রত্যেককে নিজের ধর্মগ্রন্থ অধ্যায়নের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি নিজেদের ধর্মের বাণীগুলোকে অনুধাবন করে আমাদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারি তাহলে আমাদের জীবন আলোকিত হবে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান শ্রী তপন চন্দ্র মজুমদার, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (যুগ্মসচিব) ছাদেক আহমদ, প্রকল্প পরিচালক নিত্য প্রকাশ বিশ্বাস, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হোসেন ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টি পরিতোষ চক্রবর্তী বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
এ প্রকল্পের অধীনে দেশের ৭,৪০০ টি মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এরমধ্যে পাঁচ হাজার প্রাক-প্রাথমিক, একহাজার চারশো ধর্মীয় বয়স্ক ও একহাজার ধর্মীয় শিশু শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এ সকল শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবছর দুই লাখ ২২ হাজার শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে । এ প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলায় ১৪৯টি শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এ প্রকল্প শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি তথা দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় রংপুর জেলার প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত শিক্ষা কেন্দ্রসমূহের শিক্ষক, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা মনিটরিং কমিটির সদস্য, শিক্ষার্থী অভিভাবক, শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে এরূপ মন্দিরের সভাপতি বা সম্পাদক, সনাতন ধর্মীয় প্রতিনিধি, ট্রাস্টি ও সাংবাদিকবৃন্দের অংশগ্রহণ করেন।
এএইচ/এআর