জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩২ পিএম
শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের স্বার্থে শিশু অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহারে সুনির্দ্দিষ্ট অঙ্গীকার রাখার সুপারিশ করেছে বেসরকারি সংগঠন ‘সচেতন সংস্থা’। ‘শিশু অধিকার পরিস্থিতি-২০২৫’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়।
উন্নয়ন সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)’ ও স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক (স্ক্যান) বাংলাদেশের সহায়তায় এ অনুষ্ঠান হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সচেতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাকিলা পারভীন। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণ, হত্যা ও নিপীড়নের মতো সহিংস ঘটনার কারণে শিশুদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। গত ১১ মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত এক হাজার ৮৬৭টি নেতিবাচক সংবাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১৭০টি) সংবাদ শিশু ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত, যা যৌন ও জীবন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চরম ঝুঁকি নির্দেশ করে এবং শিশুদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উত্থাপন করেন স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল। প্রতিবেদনের সুপারিশে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে শিশুদের দূরে রাখতে কঠোর আইন ও রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের জন্য প্রান্তিক অঞ্চলে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা এবং মনোসামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশু ধর্ষণ ও হত্যার দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সকল ক্ষেত্রে শিশুদের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আরজু আরা বেগম বলেন, আমরা একটা অস্থির সময় পার করছি। শিশুরাও অস্থিরতার মধ্যে আছি। পারিবারিক শিক্ষা শিশুদের প্রধার হলেও পরিবারের সদস্যদের দ্বারা শিশুরা নির্যাতিত হয়। নানাভাবে শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করলেও সেই কাজের সমন্বয় নেই। এক্ষেত্রে সবাই চাইলে শিশু একাডেমি সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে পারে। শিশু অধিকার নিশ্চিত করার কাজে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, সংবাদপত্র বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ২০২৫ সালে শিশুরা চরম নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা ও কাঠামোগত দুর্বলতার শিকার হয়েছে। যদিও শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষায় কিছু সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ইতিবাচক দিকও প্রকাশিত হয়েছে। তবে শিশুদের প্রতি সহিংসতা, বিশেষ করে যৌন শোষণ ও দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, ক্রমাগত উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। শিশুদের সামগ্রিক সুরক্ষার জন্য আইনের দ্রুত ও কার্যকর প্রয়োগ, পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে শিশু-বান্ধব করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
শাহীন আনামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মোছা. জুলিয়া জেসমিন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক রতন কুমার হালদার, ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রাম অফিসার হালিম বেগম, বাংলাদেশ প্রেস ইনষ্টিটিউটের প্রশিক্ষক জিলহাস উদ্দিন নিপুন, ‘শিশুরাই সব’ সংগঠনের উপদেষ্টা পুলক রাহা, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, শিশু অধিকার ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, এমজেএফ-এর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার পাবলো নেরুদা প্রমুখ।
বিইউ/ক.ম