মো. মেহেদী হাসান হাসিব
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মন্ত্রী পরিষদ সচিবসহ সরকারের সাত সচিবকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ সকল সচিবকে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মন্ত্রী পরিষদ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবদের ডিও লেটার দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মন্ত্রী পরিষদের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার, ব্যালট পেপারে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৬৯ রিটার্নিং অফিসার ও ৪৯৯ সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।
নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত ও আধাস্বায়ত্ত্বশাসিত অফিস/প্রতিষ্ঠান এবং প্রয়োজনে বেসরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
এ ছাড়া, কমিশন বিদেশে থাকা প্রবাসী ভোটার, দেশের অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী (যারা নিজ নির্বাচনি এলাকার বাইরে দায়িত্বে থাকবেন), নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং জেলখানা বা আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা চালু করেছে। যোগ্য ভোটারদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী যেন দায়িত্বশীল, নিষ্ঠাবান ও নিরপেক্ষ হয়ে নির্বাচন আইন মেনে দায়িত্ব পালন করেন এবং কোনো ধরনের শৈথিল্য না দেখান। এ জন্য নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুসরণ করে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে ভোটের মাঠ নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনি এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন জোরদার এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকের আগমন প্রত্যাশিত। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকের বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে ভিসা প্রসেসিং সহ যাবতীয় সহায়তা প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে আপনার সার্বিক সহযোগিতা কাম্য।
স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ— সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ— আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। এর পূর্বসূরিতে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছিল। এবারও নির্বাচনি আইন ও বিধিমালা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিবদের কাছে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রচারণা ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদেশে থাকা বাংলাদেশি ভোটার, সরকারি চাকরিরত কর্মকর্তারা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনি হেফাজতে থাকা বন্দিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডাক বিভাগের সহায়তায় ভোটারদের কাছে পোস্টাল ব্যালট দ্রুত ও নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া এবং ফেরত আনা হবে। কমিশন ডাক বিভাগকে সতর্কভাবে সমন্বয় ও গোপনীয়তা বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে প্রতীক বরাদ্দ করবেন ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। প্রচার চালানো যাবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আর ভোট গ্রহণ করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি।
এমএইচএইচ/এফএ