images

জাতীয়

হাদি হত্যা: শ্যুটার ফয়সাল ও আলমগীর ভারতে পালিয়ে যায় যেভাবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১৭ পিএম

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ওই দিনই ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যায় হাদির হত্যাকারী শ্যুটার ফয়সাল ও আলমগীর। তবে দুপুর আড়াইটার ঘটনার পর ময়মনসিংহে যাওয়া ও সীমান্ত দিয়ে কার কার সহায়তায় তারা কীভাবে ভারতে পালিয়েছে তা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ১৮ দিন পর তাদের ভারতে পলায়ন তুলে ধরে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম।  

তিনি বলেন, ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার পরপরই ঢাকা মহানগর পুলিশ, ডিবি, সিটিটিসি, র‌্যাব, সিআইডি, বিজিবি ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে ও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ শুরু করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার দিনই শ্যুটার ফয়সাল করিম মাসুদ দাউদ ওরফে রাহুল এবং তার সহায়তাকারী মোটরসাইকেল চালক মো. আলমগীর শেখকে শনাক্ত করা হয়। তাৎক্ষণিক তাদের গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম সাভার, হেমায়েতপুর, আগারগাঁও ও নরসিংদীতে অভিযান পরিচালনা করে। ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএমপির একটি টিম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের সীমান্তবর্তী এলাকা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মামলাটি নিবিড় তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ যাবৎ এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও অংশগ্রহণকারীদের ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি লুকানোর সঙ্গে জড়িত ঘটনার মূল দুই হোতা ও পলায়নে সহায়তাকারীসহ মোট ১১ জনকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। 

নজরুল বলেন, গ্রেফতারকৃতরা হলো ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির, মা হাসি বেগম, স্ত্রী শাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, মো. কবির নুরুজ্জামান নোমানিয়া ওরফে উজ্জ্বল, সিবিয়ন দিও, সঞ্জয় চিসি, মো, আমিনুল ইসলাম রাজু, আব্দুল মান্নান, আলমগীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিমন। এই ঘটনায় জব্দকৃত উল্লেখযোগ্য আলামতগুলো হলো- হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগজিন, ছোরা, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, ভুয়া নম্বর প্লেট (যে নম্বর প্লেটটি অপারেশনের সময় লাগানো ছিল), ঘটনার সময় ওসমান হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা, ঘটনাস্থল থেকে ব্যবহৃত গুলির খোসা, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য আলামতসহ প্রায় ৫৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক। 

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তদন্তে প্রাপ্ততথ্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া জবানবন্দি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ফয়সাল ও আলমগীর ঘটনার পরপরই ঢাকা থেকে সিএনজি করে আমিনবাজারে যায়। পরে তারা মানিকগঞ্জের কালামপুরে যায়। সেখান থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছে। ঘটনাটি তাদের পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। এই জন্য তাদের চিহ্নিত করার পূর্বেই তারা সীমান্ত পাড়ি দিতে সক্ষম হয়।

তিনি আরও বলেন, হালুয়াঘাটের পূর্বে মুনফিলিং স্টেশনে জনৈক ফিলিপ এবং সঞ্জয় তাদেরকে গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ফিলিপ তাকে সীমান্ত পার করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে জনৈক পুত্তির কাছে হস্তান্তর করেন। পুত্তি এক ট্যাক্সি ড্রাইভার সামির কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করেন। সামি মেঘালয় রাজ্যের তুরা নামক একটি শহরে তাদেরকে পৌঁছে দেয়। আমরা ইনফরমাল চ্যানেলে মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে যেটি জানতে পেরেছি তারা ইতোমধ্যে পুত্তি ও সামিকে গ্রেফতার করেছে।

নজরুল বলেন, আমরা সন্দেহ করি আসামিদ্বয় অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছয় জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন এবং চারজন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

এমআইকে/এফএ