নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪১ এএম
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকার একটি মাদরাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় বোমা বানানোর কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এ ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন বিস্ফোরণ হওয়া মাদরাসার পরিচালক শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- শেখ আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া, আছিয়ার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানি খাতুন।
পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণ হওয়া ঘটনাস্থল থেকে ড্রামভর্তি প্রায় ৪০০ কেজির মতো রাসায়নিক লিকুইড উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট তদন্ত করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরণ হওয়া মাদ্রাসার পরিচালক এর আগে ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন বক্তাবলী থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির সদস্য শেখ আল আমিনসহ আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব। সে সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, ৫ রাউন্ড গুলি, ২টি চাকু, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়। তবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল আমিন জড়িত ছিলেন কি না তা তদন্তের পাশাপাশি বিস্ফোরণের পেছনে রাসায়নিক বিক্রিয়া বা বিস্ফোরক ব্যবহারের আশঙ্কাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল একটি বেসরকারি মাদরাসা। মাদরাসার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শেখ আল আমিন এবং তার স্ত্রী আছিয়া। ভবনটি ভাড়া নিয়ে তারা ২০২২ সাল থেকে মাদরাসা পরিচালনা করে আসছিলেন। ভবনের চারটি কক্ষের মধ্যে দুটি মাদরাসা হিসেবে ব্যবহার করা হতো, একটিতে শেখ আল আমিন ও তার স্ত্রী আছিয়া বসবাস করতেন। আরেকটি কক্ষ ছিল বসার জন্য। ওই রুমেই বেশকিছু রাসায়নিক মজুত ছিল এবং শুক্রবার সকালের দিকে বিস্ফোরণের ফলে শেখ আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া ও তাদের তিন সন্তান আহত হয়। সন্তানদের বয়স যথাক্রমে ১০ বছর, ২ বছর ও ৬ মাস।
তিনি আরও বলেন, বিস্ফোরণের পর মাদরাসার পরিচালক শেখ আল আমিন আহত স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে প্রথমে স্থানীয় আদ্-দ্বীন হাসপাতালে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে স্ত্রী-সন্তানদের ঢামেকে রেখে শেখ আল আমিন আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে শেখ আল আমিনের স্ত্রী আছিয়াকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। এ ছাড়া আছিয়ার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকেও হেফাজতে নেওয়া হয়। এই দুজনকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অন্যদিকে আহত সন্তানরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করে দেখে, ভবনটিতে বেশকিছু রাসায়নিক দ্রব্যাদি মজুত ছিল। এ ছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য, ককটেল সদৃশ বস্তুও পাওয়া যায়। বিস্ফোরক দ্রব্য দেখামাত্র পুলিশের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়।
আছিয়া ও ইয়াসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানি খাতুন নামে একজন নারীকে হেফাজতে নেওয়া হয়। এ নিয়ে মোট তিনজন নারীকে গ্রেফতার করা হয়।
একেএস/এফএ