জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৯ জুলাই ২০২২, ০৫:৪৫ পিএম
শেষ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। দলে দলে মানুষ আসছেন বিভিন্ন হাটে। দরকষাকষি করে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের কোরবানির পশু। তবে পশু কেনার পর অনেকেই বাসাবাড়ি পর্যন্ত নিতে পারে না। অবশ্য এরই সমাধান মিলছে হাটেই। মৌসুমি শ্রমিকরা পশু পৌঁছে দিচ্ছে বাড়িতে। এজন্য তাদের পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। গরু বড় হলে বা হাট থেকে বাসা বেশি দূরে হলে পারিশ্রমিকও বেড়ে যায় মৌসুমি শ্রমিকদের। অবশ্য ক্রেতাদের সে বিষয়ে আপত্তি নেই। যারা নিজেরাই নিতে পারেন তারা পশুর রশি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আর যারা পারছেন না তারা মৌসুমি শ্রমিকের সহায়তা নিচ্ছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন হাটের দৃশ্য এটি। শনিবার (৯ জুলাই) কয়েকজন মৌসুমি শ্রমিকরা জানান দুই তিন দিন ধরে তাদের আয় ভালোই হচ্ছে।
ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরে একবার কোরবানি উপলক্ষ্যে কেনা পশু নিয়ে শহুরে লোকজন অনেক সময় বেকায়দায়ই পড়েন। গরুকে হাট থেকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে যেতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় তাদের। কেননা এসব পশু আয়ত্বে রাখার মতো কৌশল জানা নেই অনেকের। সেই সঙ্গে ভয় তো আছেই। এজন্যই মূলত দরকার হয় আলাদা মানুষের। সেজন্য মৌসুমি শ্রমিকদের স্মরণাপন্ন হতে হয়।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন হাটে ভিড় জমিয়েছেন মৌসুমি শ্রমিকরা, যারা বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। তাদের কেউ কেউ আবার পশুর কোরবানির মৌসুমি কসাই হয়ে যাবেন। এরপর ঈদ শেষে বাড়ি ফিরবেন। আবার রাজধানীর অনেক রিকশাচালক, ভ্যানচালক, বিভিন্ন শ্রমিক এখন মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কোরবানির পশু টেনে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।
শনিবার আফতাবনগর হাট থেকে গরু কিনে এমন পরিস্থিতিতে পড়েন জুলহাস উদ্দিন। সঙ্গে আসা স্ত্রী-সন্তান কেউ গরুকে বাসায় নিতে পারবেন না। জুলহাস উদ্দিন নিজেও কাছে যেতে পারছেন না। পরে দু্জন মৌসুমি শ্রমিকের সহায়তা নেন।
হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্টে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দুই হাজার টাকা ঠিক করেন। জুলহাস উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, এটি একটি সুবিধা আমরা যারা গরু বাসায় নিতে পারিনা তাদের জন্য। অবশ্য এতে শ্রমিকদেরও একটা আয়ের ব্যবস্থা হলো।
একই হাট থেকে গরু কেনা গফুর সরকারের খরচ পরেছে আরও বেশি। বনানীর বাসায় পৌঁছাতে তিন হাজার টাকা দুজনকে দিতে হবে।
মৌসুমি শ্রমিক জামাল বলেন, এখানে নির্দিষ্ট টাকার কথা নেই তবে দূরত্ব বেশি হলে একটু বেশি নেই। তবে যতো কাছেই হোক একজন মানুষ এক হাজারের নিচে যেতে চায় না। গরু টেনে নেয়াও কষ্ট বলেন তিনি।
ওয়াহাব নামে একজন বলেন, আমি এই শহরে রিকশা চালাই। এখন সাহেবদের গরু পৌঁছে দিচ্ছি। গতকাল শুক্রবার ৬ হাজার টাকা আয় হইছে। আজ সকালে দুই হাজার পাইছি। আজ শেষ বেচাকেনা একটু বেশি আয় হতে পারে প্রত্যাশা করেন তিনি।
উত্তরা হাটেও দেখা যায় মৌসুমি শ্রমিকদের। এই হাটে গরু কেনা শিরিন আক্তার বলেন, আমি একজন মহিলা মানুষ। দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছি। ওদের বাবা নেই। ছেলেরা গরু টেনে নিতে পারবে বলেন? ওরাতো গ্রামে বড় হয়নি। আর বড় গরু দেখলে কাছেই যেতে যায় না। আমার ছোট ছেলেটা খাসি নিয়ে যেতে যাচ্ছে আর গরু নেওয়ার জন্য দুইজন লোক ৪ হাজারে ঠিক করেছি গুলশান নেব। দুই হাজার গাড়ি ভাড়া আর বাসার নামিয়ে বেঁধে কিছু খাবার দিয়ে আসবে এজন্য দুজনকে দেব দুই হাজার।
মৌসুমি শ্রমিক আবুল মিয়ার বাড়ি রংপুর। উত্তরা হাটে তিনি এসেছেন ঢাকায় মৌসুমি কসাই হতে। এর আগে দুদিন ধরে গরু পৌঁছে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এই কয়টা দিন বাড়তি আয় হলে ভালোই লাগে। এলাকায় কৃষি শ্রমিক আবুল মিয়া বলেন, শুক্রবার তিন হাজার টাকা আয় হয়েছে। শনিবার একজনের গরু পুরান ঢাকায় নামিয়ে দিয়ে ১৫০০ টাকা পেয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন হাট থেকে কেনা গরু বাসায় বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক কিশোরও কাজ করছেন। ক্রেতা পেলেই তাদের পিছু নিতে দেখা যায়।
অনেকেই গরুর পাশাপাশি খাসিও পৌঁছে দিচ্ছেন। তবে গরু পৌঁছে দেওয়ার সংখ্যা বেশি। হৈ হল্লোড় করে আনন্দ করতে করতে ক্রেতার বাড়ি পৌঁছে দেন কোরবানির পশু।
গাবতলী হাটে হকার এবং বর্তমানে মৌসুমি শ্রমিক তমিজ উদ্দিন বলেন, একটি গরু নেওয়াও কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ। গরু অনেক সময় গাড়ি দেখে দৌড় দেয়। তবুও ঈদের আগে কিছু বাড়তি আয়ে কাজ পাল্টে ফেলি। রাজধানীর হাটগুলোতে ভালোই আছেন মৌসুমি শ্রমিকরা। এমন সেবা পেয়ে খুশি ক্রেতারাও।
এদিকে ঈদের আগের দিন সকাল থেকে রাজধানীর হাটগুলো সরগরম ক্রেতাদের পদচারণায়। বেচাকেনাও জমজমাট। কয়েকটি হাটের ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে ক্রেতারা আজ হাটে আসছেন পছন্দ হলে কিনেই ফিরবেন কেননা কাল ঈদ। বিক্রেতারাও দাম খুব একটা আটকে রাখবেন না। সকাল থেকে বিক্রিও ভালো হচ্ছে। রাজধানীর অন্যান্য হাটেও ভালো বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে আজও অনেক পশুবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে হাটে।
ডব্লিউএইচ/এমআর