images

জাতীয়

গ্রহণযোগ্য ও মানসম্মত নির্বাচনই এখন বড় চ্যালেঞ্জ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২১ পিএম

গ্রহণযোগ্য ও মানসম্মত নির্বাচনই এখন মূল চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপের এটিএম শামসুল হক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নির্বাচনোত্তর উত্তরণ পর্বে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠেছে নির্বাচন। তবে নির্বাচন হবে কি না—তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো, সেই নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য ও মানসম্মত হবে। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টির মতো নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক নথি পর্যালোচনা করেছে এবং সেগুলো সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছেও উপস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নির্বাচন সংস্কার সংক্রান্ত মোট ৩১টি প্রস্তাব আলোচনায় রয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে এর মধ্যে মাত্র দুটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

তিনি বলেন, ‘যে দুটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে গেছে, তার একটি হলো জেন্ডার গ্যাপ কমানোর পদক্ষেপ এবং অন্যটি হলো নির্বাচনের প্রাক্কালে যারা ১৮ বছরে উপনীত হবে, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা। এছাড়া মাত্র চারটি প্রস্তাবে কিছু সীমিত অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। গত দেড় থেকে দুই মাসে দেশের আটটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে আঞ্চলিক প্রাক-নির্বাচনী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় দুটি প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে-দেশের মানুষ কেমন নির্বাচন চায় এবং আগামী সরকারের কাছে তাদের প্রধান দাবি কী। নাগরিকদের কাছে এখন দুটি শব্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-‘অংশগ্রহণমূলক’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ নির্বাচন। কিন্তু এই দুটি শব্দের প্রকৃত অর্থ ও বাস্তব প্রয়োগ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই ব্যাখ্যাগুলো স্পষ্ট না হলে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের মান নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হবে।’

নিরাপত্তাকে নির্বাচন সংস্কারের একটি নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘শুধু ভোটের আগেই নয়, ভোটের পরও সহিংসতা ও ভয়ভীতি থেকে জনগণ নিরাপত্তা চায়। বিশেষ করে নারী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, দুর্গম এলাকার ভোটারদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।’

তিনি রাঙামাটির উদাহরণ টেনে বলেন, ‘দুর্গম এলাকায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ না করে এলাকাভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের দাবি উঠেছে। পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনীর আরও সক্রিয় ভূমিকার কথাও নাগরিকদের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে বলা হয়েছে।’

নির্বাচনী ব্যয় প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণ না হলে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতিও কমানো যাবে না। মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে ইতোমধ্যেই নির্বাচনী ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আচরণবিধি কার্যকরে ব্যর্থতা স্পষ্ট। নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন-উভয় পক্ষই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক দল সংস্কার না হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ বেড়েছে এবং এখন কমিশন তার সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।’

‘না’ ভোট ব্যবস্থার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থাটি “না ঘরকা, না ঘাটকা” অবস্থায় আছে। সব কেন্দ্রে কার্যকর ‘না’ ভোটের সুযোগ না থাকলে ভোটাররা ব্যালট বাতিল করে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হবে। যদি দেখা কোনো ব্যালট কাটা থাকে তাহলে বুঝতে হবে তিনি না ভোট চেয়েছিলেন। না ভোটের ঘর পাননি বলেই এমন কাজ করেছেন।’

নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার প্রশ্ন তুলে তিনি প্রস্তাব করেন, জনপ্রতিনিধিদের বাধ্যতামূলক বাৎসরিক প্রতিবেদন, এলাকাভিত্তিক কার্যালয় ও অভিযোগ গ্রহণের স্বচ্ছ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘অনেক নিবন্ধিত পর্যবেক্ষকেরই প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে। আগামী কয় মাস বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে জাতীয় ঐক্য ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

এএইচ/এমআই