images

জাতীয়

ঢাকা মেডিকেলে ট্রলিতে ফেলে যাওয়া সেই তরুণীর পরিচয় মিলেছে

আব্দুল কাইয়ুম

২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:০৪ পিএম

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মাগুরা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন ২২ বছর বয়সী রাশেদা আক্তার। মাত্র ১৬ দিন শহরে থাকার পর তার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। দুই দিন আগে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনের ট্রলিতে অজ্ঞাত এক যুবক তার মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায়। নিখোঁজ বোনকে পেতে হন্য হয়ে খুঁজলেও কোথাও পাননি বড় বোন খালেদা। অবশেষে এক দিন পর ঢাকা মেডিকেলের মর্গে বোনের নিথর দেহ খুঁজে পান তিনি।

‎অজ্ঞাত হিসেবে মর্গে থাকা নিহত রাশেদা আক্তার মাগুরা সদর উপজেলার পুখুরিয়া গ্রামের মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের মেয়ে।

‎হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২২ ডিসেম্বর (সোমবার) রাতে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে ট্রলিতে এক তরুণীর মরদেহ ফেলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যায় এক যুবক। পরে মরদেহটি ঢাকা মেডিকেলের মর্গে অজ্ঞাত হিসেবে রাখা হয়। ট্রলিতে রাশেদার মরদেহ ফেলে রেখে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করার পরদিন মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢামেকের মর্গে গিয়ে বড় বোন খালেদা ও তার স্বামী মামুন রাশেদার মরদেহ শনাক্ত করেন।

‎নিহতের বোন খালেদা আক্তার বলেন, ‘আমার ছোট বোন সম্প্রতি মাগুরার আলোকদিয়া অমরেশ বসু ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ১৬ দিন আগে মাগুরা থেকে ঢাকায় আমার মিরপুরের বাসায় আসে। পড়ালেখার পাশাপাশি মিরপুরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরিতে যোগ দেয়। তার পড়ালেখা করে বড় হওয়ার স্বপ্ন ধূলায় মিশিয়ে দিয়ে হত্যা করল।’

‎নয়ন নামে এক যুবক রাশেদাকে হত্যা করেছে এমন অভিযোগ করে খালেদা আক্তার বলেন, রাশেদাকে গ্রামের প্রতিবেশী মতিউর রহমানের ছেলে নয়ন ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করতো। নয়নের যন্ত্রণায় আমার বোন ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারত না। তার যন্ত্রণায় আমার বোন ঢাকা চলে এসেছে। সে নয়ন ঢাকায় এসে আমার বোনকে শ্বাসরোধ করে মেরে ঢাকা মেডিকেলে ফেলে রেখে পালিয়েছে। আমরা নয়নসহ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার কঠিন বিচার চাই।’

‎খালেদার স্বামী মামুন বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে মাগুরা থেকে ফোনে তারা জানতে পারেন যে, এলাকায় রটেছে নয়ন রাশেদাকে মেরে ফেলেছে এবং তার পরিবার পলাতক রয়েছে। কিন্তু রাশেদার মরদেহ কোথায় আছে সেইটা কেউ জানে না। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিভিন্ন জায়গায় রাশেদার মরদেহ খুঁজতে থাকি। কোথাও না পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসে শুনি একজন তরুণীর মরদেহ হাসপাতালের সামনে এক যুবক রেখে চলে গেছে। আমরা হাসপাতালের লোকদের সহায়তায় মর্গে গিয়ে আমার শালীর মরদেহ দেখে শনাক্ত করি।’

‎মামুন আরো বলেন, ‘গত শনিবার রাশেদা কর্মস্থলে যাননি। রাত ৮টার দিকে সে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। পরে জানা যায়, ওই রাতে নয়ন মিরপুরে রাশেদার বাসার সামনে এসে তার সঙ্গে দেখা করেন। একটি দোকানের সামনে তাদের দুজনকে প্রচণ্ড ঝগড়া করতেও দেখেছে দোকানের লোকজন। এরপর থেকেই রাশেদা নিখোঁজ এবং তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। আমরা খুঁজতে খুঁজতে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসে তার মরদেহ খুঁজে পেয়েছি।’

ঢাকা মেডিকেলের মর্গের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, ‘নিহত তরুণীর থুতনিতে কালচে দাগ রয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল। যে ব্যক্তি ওই তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন, তিনি কৌশলে পালিয়ে গেছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করা হয়েছিল। গতকাল বিকেলে এসে অজ্ঞাত ওই তরুণীর মরদেহ শনাক্ত করেছে।’

‎মিরপুর মডেল থানার ওসি মো. গোলাম আজম জানান, নিহতের স্বজনরা মঙ্গলবার রাতে থানায় এসে অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। অভিযুক্ত নয়নকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

‎একেএস/এমআর