images

জাতীয়

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তির তাগিদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৬ পিএম

দুর্যোগ ও জলবায়ু প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধিতা-সমন্বিত সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোকে প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করার তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা। তারা মনে করেন, এতে করে কর্মসূচির কার্যকারিতা বোঝা যাবে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইন এ ‘দুর্যোগ ও জলবায়ু প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধিতা-সমন্বিত সামাজিক সুরক্ষা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব বলেন।

অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে, সিবিএম গ্লোবাল বাংলাদেশ ও নবলোক পরিষদের সহযোগিতায় ‘এস্টাবলিশিং ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট কমিউনিটিজ ইন সাতক্ষীরা’ প্রকল্পের আওতায় আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রতিনিধি, এনজিও, আন্তর্জাতিক এনজিও, সিএসও, গণমাধ্যমকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং জাতীয় ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শারমিন আরা, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ও উপসচিব মো. ফারুক আহমদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে সরকার এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজমুল হক।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন মহুয়া পাল। সেশন পরিচালনা করেন সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইনক্লুশন লিড তাসলিম জাহান।

প্রধান অতিথি কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোকে প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করা জরুরি। এতে কর্মসূচির কার্যকারিতা বোঝা যাবে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

নিতাই চন্দ্র দে সরকার বলেন, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর গবেষণার ফলাফল ও সুপারিশ দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশ ২০১৯ এবং জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০২৬ থেকে ২০৩০ পর্যালোচনার সময় বিবেচনায় নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।

ড. মোহাম্মদ নাজমুল হক জানান, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে এনজিওগুলোর সঙ্গে সহযোগিতায় আগ্রহী।

শারমিন আরা বলেন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বর্তমানে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে একটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিনি বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীসহ আরও বেশি সংখ্যক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার এবং প্রতিবন্ধিতার ধরণ অনুযায়ী তথ্য সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেন।

মো. ফারুক আহমদ বলেন, প্রতিবন্ধিতা-সমন্বিত সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরও সমন্বিতভাবে কাজ করবে।

মহুয়া পাল বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা নিয়ে নেতিবাচক মানসিকতা পরিবর্তন না হলে বাস্তব অগ্রগতি সম্ভব নয়।

আলবার্ট মোল্লা বলেন, নীতিনির্ধারকদের এক ধরনের সমাধানের চিন্তা থেকে বের হয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা অনুযায়ী জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর হেড অব প্রোগ্রাম মো. সোহেল রানা অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বর্তমান চিত্র, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় বিষয় তুলে ধরেন।

তিনি জানান, ২০২৫ থেকে ২০২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে মোট ৯৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯টি কর্মসূচি দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মাত্র সাতটি কর্মসূচি প্রতিবন্ধিতা সংশ্লিষ্ট এবং এর মধ্যে কেবল একটি কর্মসূচি সরাসরি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য, যা হলো প্রতিবন্ধী ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচি।

তিনি আরও বলেন, ওষুধ, যাতায়াত ও সহায়ক উপকরণের মতো প্রতিবন্ধিতা-সম্পর্কিত অতিরিক্ত ব্যয় হিসাব করলে দারিদ্র্যের হার ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশে দাঁড়ায়। প্রতিবন্ধী সদস্য রয়েছে এমন পরিবারকে গড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হয়।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা মত দেন, ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরের সামাজিক সুরক্ষা বাজেটকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা অনুযায়ী আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রাসঙ্গিক করতে হবে।

বিইউ/ক.ম