images

জাতীয়

‘সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতেই হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৪ পিএম

জাতিসংঘের বিশেষ দূত আইরিন খান প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এসব ঘটনার মূল উদ্দেশ্য ছিল সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখানো এবং নীরব করে দেওয়া। সরকারকে এসব ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করে নেপথ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করতে হবে।’

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা মিলনায়তনে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক যৌথ প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদ।

আইরিন খান বলেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এসব হামলার মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মীদের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। জনগণের ক্ষোভকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে যেভাবে শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদপত্রের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং নিন্দনীয়।’

হামলার ঘটনাগুলোকে একটি উসকানি হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি উসকানি এবং এই উসকানির পেছনে আসলে কারা রয়েছে, তা তদন্ত করে প্রকাশ করার দায়িত্ব সরকারের। এ ধরনের উসকানি সমাজকে আরও অস্থিতিশীল করার ঝুঁকি তৈরি করে, যা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আইরিন খান বলেন, ‘ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়েছে, যাতে সমাজের ভেতরে ভয় সৃষ্টি হয়। এই হত্যাকাণ্ড এবং সংবাদমাধ্যমে হামলার ঘটনাগুলো একই ধারার অংশ, যার লক্ষ্য হলো প্রতিবাদী কণ্ঠকে দমন করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা সাহস করে কথা বলছি এবং প্রতিবাদ করছি, মূলত আমাদের বিরুদ্ধেই এই আক্রোশ ঝাড়া হচ্ছে এবং উসকানি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে হাদির হত্যাকাণ্ড ও সংবাদমাধ্যমে হামলার ঘটনাগুলোর দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দায়ীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।’

আইরিন খান বলেন, ‘সরকার যদি এসব ঘটনার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সরকারের অঙ্গীকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। দায়ীদের বিচারের আওতায় না আনলে সহিংসতার সংস্কৃতি আরও শক্তিশালী হবে।’

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে হাতে থাকা অল্প সময়ের মধ্যে সুশীল সমাজ এবং বিশেষ করে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত। তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু, শান্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবে রক্ষা করতে চাইলে সবার আগে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সম্ভব নয় প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশও। সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক কণ্ঠ রক্ষা করা মানেই গণতন্ত্রকে রক্ষা করা— এ সত্য অস্বীকার করার সুযোগ নেই।’

এএইচ/এফএ