নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন এমন এক ভয়াবহ সময় পার করছে, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর মূল সংকট নয়— সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার। সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা প্রমাণ করে দিয়েছে, এটি কেবল সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আক্রমণ নয়; এটি সরাসরি মানুষের জীবননাশের দিকে ঠেলে দেওয়ার একটি ভয়ংকর প্রবণতা। এই বাস্তবতায় সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানো মানে শুধু পেশাগত সংহতি নয়, এটি জীবন রক্ষার শামিল।’
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা মিলনায়তনে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক যৌথ প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদ।
মাহফুজ আনাম বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ‘হত্যার যুগে’ প্রবেশ করেছে। এখন আর শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে কে বেঁচে থাকবে আর কে বাঁচতে পারবে না। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে গিয়ে যারা সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে, তারা আর সীমা মানছে না।’
ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সাম্প্রতিক হামলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘হামলার সময় প্রায় ২৫ থেকে ২৬ জন সহকর্মী ভবনের ছাদে আটকে পড়েছিলেন। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ফায়ার সার্ভিসকে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি শুধু ভবন পুড়িয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে সাংবাদিকদের বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া যেত। কিন্তু তা করা হয়নি। এর অর্থ একটাই— হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল ডেইলি স্টারের কর্মীদের হত্যা করা। তারা শুধু ভবন পোড়াতে চায়নি, তারা আমাদের সহকর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছিল।’
মাহফুজ আনাম বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কেবল প্রতিক্রিয়া দেখানো বা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করাই যথেষ্ট নয়। এখন সময় এসেছে স্পষ্ট ও শক্ত অবস্থান নেওয়ার। যারা সহিংসতার মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সমাজকে একযোগে জবাব দিতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানে সত্যের ওপর হামলা, আর সত্যকে হত্যা করা হলে গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না। এই সহিংসতার বিরুদ্ধে এখনই প্রতিরোধ গড়ে না তুললে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।’
প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। তারা বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে দেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব নয়। অবিলম্বে হামলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান তারা।
এএইচ/এফএ