নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের প্রতি মানবিক না হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আমরা মানবিক হবো, কিন্তু যারা ভাঙচুর, সহিংসতা, হত্যা করে, তাদের প্রতি মানবিক হওয়ার দরকার নেই। মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগস্টের পর থেকে মানবিক পুলিশিংয়ের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু কেউ কেউ সেই মানবিকতার সুযোগ নিয়ে সহিংসতা চালিয়েছে। এবার আর সেই সুযোগ দেওয়া হবে না।
সানাউল্লাহ বলেন, শহীদ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড আমাদের জাতীয়ভাবে নাড়া দিয়েছে। এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যারা নির্বাচনকে আন্ডারমাইন করতে চায়, তারা ব্যর্থ হবে।
তিনি জানান, এই হত্যাকাণ্ডে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। মূল তিন অভিযুক্তের মধ্যে দুজন ধরা পড়েছে, একজন পলাতক। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ যেন পালাতে না পারে, সে জন্য গোয়েন্দা সংস্থাসহ বাহিনীসমূহকে সতর্ক করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা কখনো বলিনি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করেনি। তবে introspection দরকার—কোনো ল্যাকিংস ছিল কি না, কোনো ফুটপ্রিন্ট আগে থেকে ধরা যেত কি না, সেটা দেখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, যারা হেরে যায়, তারাই চোরাগোপ্তা হামলার পথ বেছে নেয়। নির্বাচন কমিশন এসব কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবে না।
কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, যারা নির্বাচনকে আন্ডারমাইন করতে চায়, তারা শহরাঞ্চলকে টার্গেট করছে। খুব অর্গানাইজডভাবে তারা কাজ করছে যাতে মিডিয়া কাভারেজ বেশি হয়, আতঙ্ক ছড়ায়।
তিনি আরও বলেন, এই হামলাগুলো নির্বাচনের পরিবেশকে বিকৃত করছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো মূলধারার রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি, তবুও ঘটনাগুলোর প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই।
মাঠপর্যায়ে যৌথবাহিনীর ‘ডেভিল হান্ট’ নামের বিশেষ অভিযান চলছে জানিয়ে কমিশনার বলেন, গত ১৩ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে প্রতিদিন গড়ে ২০০০ জন সন্ত্রাসী গ্রেফতার হচ্ছে। একটি বাহিনী অলরেডি ৫৬টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
তিনি জানান, অবৈধ মোটরসাইকেলসহ হাজার হাজার যানবাহন চেক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে রিমোট এলাকাগুলোতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
কমিশন বলছে, এই অভিযানকে আরও দৃশ্যমান করতে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তথ্য জানানো হবে। এছাড়া এক লাখ সেনা মোতায়েন, সমন্বিত প্রস্তুতির আশ্বাস নিয়েও কথা বলেন তিনি।
তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে সানাউল্লাহ বলেন, সেনাবাহিনী এক লাখ সদস্য মোতায়েন করবে। এর এক-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে মাঠে রয়েছে। বাকিরা ধাপে ধাপে নির্বাচনের আগেই মোতায়েন হবে।
‘তিন বাহিনী প্রধান আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তারা সমন্বিতভাবে কাজ করছেন এবং কোথাও বাহিনী কমানো হয়নি। বরং প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ানো হচ্ছে।’
‘জেলা পর্যায়ের সমন্বয় সেলগুলোকে অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী দমন ও ম্যাজিস্ট্রেসি তৎপরতায় সক্রিয় করা হয়েছে। যেখানে একাধিক বাহিনী একসঙ্গে কাজ করবে, সেখানে অপারেশন অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে,’ বলেন তিনি।
এরআগে গত ২০ অক্টোবর, ২৭ নভেম্বর ও সবশেষে ১৪ ডিসেম্বর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সুযোগ ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে প্রতীক বরাদ্দ করবেন ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। প্রচার চালানো যাবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। আর ভোট গ্রহণ করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি।
এমএইচএইচ/এএস