আব্দুল হাকিম
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২২ পিএম
ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ থেমে যায় কোলাহল। কেউ স্লোগান দিচ্ছিল, কেউ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল। ঠিক তখনই প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর কণ্ঠে শোনা যায় দৃঢ় অথচ সরল একটি কথা—হাদি আংকেলকে মৃত বলবেন না। তিনি সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হয়েছেন।
কথাগুলো বলছিল ছোট্ট নিহা। বয়সে সে শিশু, কিন্তু বক্তব্যে ছিল স্পষ্ট অবস্থান। সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হাদিকে সে কোনোভাবেই মৃত বলতে রাজি নয়। তার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার—হাদি আংকেল শহীদ, আর শহীদদের কখনো মৃত বলা যায় না।
চারপাশে সহিংসতার খবর, হত্যার শিরোনাম আর রাজনৈতিক উত্তাপের ভিড়ে নিহার কথাগুলো আলাদা করে চোখে পড়ে। সেখানে নেই কোনো রাজনৈতিক ভাষা, নেই বড়দের মতো যুক্তির জটিলতা। আছে শুধু বিশ্বাস, ন্যায়বোধ আর শিশুমনের সরল সিদ্ধান্ত।
নিহা বলে, তারা সবাই দোয়া করে যেন আল্লাহ তায়ালা হাদি আংকেলকে হজরত আবু হানজালার মতো শহীদের মর্যাদা দিয়ে কবুল করেন। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করেন। হাদি আংকেল সব সময় বলতেন, তাঁর কিছু হলে যেন দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হয়। এখন সবার দায়িত্ব যত দ্রুত সম্ভব বিচার নিশ্চিত করা।
নিহার এই কথাগুলো শুনে উপস্থিত অনেকেই নীরব হয়ে যান। কেউ চোখ মুছেন, কেউ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন।
হাদিকে সে খুব কাছ থেকে চিনত কি না—এই প্রশ্নে নিহার উত্তর সংক্ষিপ্ত। সে তাঁকে চিনত না, তিনিও তাকে চিনতেন না। তবু তার বিশ্বাস, হাদি আংকেল ভালো মানুষ ছিলেন। একটু থেমে সে যোগ করে, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। এটাই তার ভালো লেগেছে।
নিহা আরও জানায়, হাদি আংকেল প্রায়ই বলতেন—যদি তাঁর কিছু হয়ে যায়, তাহলে যেন দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হয়। সেই কথাটিই এখন সে সবার সামনে বলছে। তার মতে, এখন সবার দায়িত্ব একটাই—সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করা এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।
একজন প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মুখে বিচার, দায়িত্ব কিংবা দোষী—এই শব্দগুলো অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সহিংসতার ঘটনা শুধু বড়দের জীবনেই নয়, শিশুদের মনেও গভীর ছাপ ফেলে। নিহার বক্তব্য সেই বাস্তবতারই নীরব দলিল।
নিহত হাদির মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের শোকের বিষয় নয়। এটি সমাজের সামনে ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থানের প্রশ্নও তুলে ধরে। সেই প্রশ্নটি কোনো রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে নয়, উঠে এসেছে একটি শিশুর কণ্ঠ থেকে—সবচেয়ে সরল ভাষায়, কিন্তু সবচেয়ে তীব্রভাবে।
আইনের ভাষা না হলেও, নিহার কথাগুলো মানুষের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। শহীদ আর মৃত্যুর পার্থক্য সে হয়তো পাঠ্যবই থেকে শেখেনি, কিন্তু ন্যায় আর অন্যায়ের সীমারেখা সে ঠিকই চিনে নিয়েছে।
এএইচ/এআর