images

জাতীয়

ডেইলি স্টারের পোড়া অফিস দেখে বাকরুদ্ধ কর্মীরা, ফটোসাংবাদিকের কান্না

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম

ওসমান হাদির মৃত্যুর ক্ষোভে পুড়িয়ে দেওয়া দ্য ডেইলি স্টারের অফিস দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন গণমাধ্যমটির কর্মীরা। সবকিছু হারিয়ে কেঁদে ভাসিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ফটোসাংবাদিকরা।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে অন্য দিনের মতোই প্রিয় কর্মস্থলে আসেন দ্য ডেইলি স্টারের কর্মীরা, তবে সবার মনে ছিল হারানোর বেদনা।  

এদিন পুড়ে যাওয়া অফিসের চিত্র দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ডেইলি স্টারের ফটোসাংবাদিক প্রবীর দাশ। অন্য দিনের মতো অফিসে এলেও তার হাতে ছিল না ক্যামেরা কিংবা লেন্স। নিজের কর্মস্থল পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তার পেশাগত জীবনে তোলা সব ছবিও শেষ হয়ে গেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে হাদির মৃত্যুর খবর আসে। এরপরই ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় বিক্ষুব্ধ এক দল মানুষ। 

এদিন প্রথমে কারওয়ান বাজারের প্রথম আলো কার্যালয়ে এবং কিছুক্ষণ পরে কাছাকাছি দূরত্বে তেজতুরি পাড়ায় অবস্থিত ডেইলি স্টারে গিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। 

যে সময়ে এই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়, তখন দুই প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মী বাসায় ছিলেন। অনেকে আবার অফিসেও ছিলেন। বিশেষ করে ডেইলি স্টারের ২০ জনের বেশি কর্মী আগুনের কারণে ছাদে আটকা পড়েন। পরে তাদের ফায়ার সার্ভিস ক্রেন দিয়ে উদ্ধার করে। যারা রাতে ছিলেন না তারা শুক্রবার সকালে অফিসে এসে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। 

বিক্ষুব্ধ জনতার দেওয়া আগুন আর ভাঙচুরের পরে অনেকটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে দ্য ডেইলি স্টার। সকালের দিকে অনেকে এসে সেই চিত্র দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদেরই একজন ফটোসাংবাদিক প্রবীর দাশ। যিনি এ পর্যন্ত ছবি তুলে অনেক পুরস্কার জিতেছেন। অফিসের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া দামি ক্যামেরা থেকে শুরু করে সবকিছু আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।

DS2

প্রবীর দাশ জানান, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে তার বহু বছরের পেশাগত জীবনের অমূল্য স্মৃতি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন শেষ। আমার ড্রয়ারে যা ছিল, তার কিছুই এখন নেই।’

বৃহস্পতিবার রাতের ওই আগুনে ডেইলি স্টার ভবনের নিচের তিন তলা অনেকাংশ পুড়ে গেছে। আর ওপরের সাত তলা পর্যন্ত প্রত্যেক ফ্লোরে দেখা গেছে ভাঙচুরের চিহ্ন।

এ সম্পর্কে প্রবীর দাশ বলেন, ‘আমাদের ক্যামেরা, লেন্স ও আনুষঙ্গিক মিলিয়ে একেকজন ফটোসাংবাদিকের ড্রয়ারে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার জিনিস থাকে। আমার সব স্মৃতি—এত বছরের ক্যারিয়ারের তোলা ছবি, চার-পাঁচটি হার্ডড্রাইভ—সব পুড়ে গেছে।’

ডেইলি স্টারের প্রধান ফটোসাংবাদিক জানান, তাদের বিভাগের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তিনি বলেন, ‌‘ক্যামেরা, লেন্সসহ কিছুই নেই। একটি লেন্সের দামই কয়েক লাখ টাকা। আমাদের সব শেষ।’

জানা গেছে, ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোর, ফার্স্ট ফ্লোর ও সেকেন্ড ফ্লোর পুড়ে গেছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিল রিসেপশন ও একটি এক্সিবিশন হল। সেকেন্ড ফ্লোরেও আরেকটি এক্সিবিশন হল ছিল। থার্ড ফ্লোরে ছিল স্টোররুম।

প্রতিষ্ঠানটির অন্য কর্মীরা জানান, পঞ্চম ফ্লোরের ক্যান্টিন ভাঙচুর করা হয়েছে। এর ওপরের কনফারেন্স হলের চেয়ার-টেবিল ভেঙে ফেলা হয়েছে। তার ওপরের ফ্লোরগুলোতে প্রশাসন, হিসাব, মানবসম্পদ বিভাগ ছিল। সেখানকার সব ভেঙে তছনছ করা হয়েছে। ষষ্ঠ তলায় নিউজরুমের এক পাশের কম্পিউটার ভেঙে ফেলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংঘটিত এই ঘটনায় শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণ প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় দুই গণমাধ্যমে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বিইউ/এএইচ