নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
তেজগাঁও কলেজের ছাত্রাবাসে সংঘর্ষে আহত হয়ে শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান রানার মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় রানার হত্যার বিচার দাবিতে ব্যানার হাতে নিয়ে কলেজের সামনে ও আশপাশের এলাকায় সড়কে অবস্থান নেন তারা।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে কলেজের মূল ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক শিক্ষার্থী। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ফার্মগেট এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্নের আশঙ্কায় তেজগাঁও কলেজের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এদিকে পূর্বঘোষিত সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পরে স্থগিত করে পরদিন পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, তেজগাঁও কলেজের প্রধান ফটক, ফার্মগেটমুখী সড়ক ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঘটনার পর চিহ্নিত আসামি থাকা সত্ত্বেও পুলিশ প্রথমে ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছিল। এরপর আরও ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও এখনো মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়নি। তাদের দাবি, রাজনৈতিক চাপের কারণে প্রশাসন আসামিদের ধরছে না এবং একটি সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
বক্তারা বলেন, তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান রানার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাদের একটাই দাবি—রানাকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো ‘শাকিব’ এভাবে প্রাণ না হারায় এবং কোনো মায়ের কোল খালি না হয়।
বক্তারা আরও বলেন, রানার হত্যাকাণ্ড তাদের কাছে শহীদ আবরার ফাহাদের হত্যার স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। আবরার ফাহাদ যেমন ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তেমনি মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় সাকিবুল রানাকেও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, পূর্বঘোষিত সড়ক অবরোধ কর্মসূচি আজ স্থগিত করা হয়েছে। আজ প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং পরে নিহত রানার বাবা-মায়ের বক্তব্য শোনা হবে। ভবিষ্যতে আরও বড় কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে কলেজ প্রশাসন ও অধ্যক্ষ কলেজ বন্ধ করে দিয়েছেন। ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলনে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য পুরো ক্যাম্পাস বন্ধ রাখা হয়েছে। অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছেন না এবং ফোনও ধরছেন না বলে অভিযোগ ওঠে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, সাকিবুল হাসান রানা একজন ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থী ছিলেন। তার হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষাঙ্গণে এটি প্রথম হত্যাকাণ্ড। অথচ স্পষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এখনো দোষীদের গ্রেফতার করা হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। নিহত শিক্ষার্থীর বাবা কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তাকে সময় দেওয়া হয়নি। একজন নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের প্রতি এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়িয়ে যারা সন্ত্রাসীদের আড়াল করছে, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকার যোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বক্তারা জানান, নতুন বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গণে কোনোভাবেই সন্ত্রাস ও জুলুমের রাজত্ব কায়েম হতে দেওয়া হবে না। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হলে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়; এটি ন্যায়বিচারের আন্দোলন। সাকিবুল রানা হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এর আগে, গত ৬ ডিসেম্বর রাতে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান রানা (বিজ্ঞান বিভাগ, সেশন ২০২৪–২৫), হৃদয় আহমেদ (মানবিক বিভাগ, সেশন ২০২৪–২৫) এবং আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত (মানবিক বিভাগ, সেশন ২০২৫–২৬) গুরুতর আহত হন। আহতদের প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে সাকিবুল হাসান রানাকে মালিবাগের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১০ ডিসেম্বর) তার মৃত্যু হয়।
এএইচ/এমআই