images

জাতীয়

মুজিববাদকে উপড়ে ফেলতে হবে: মাহফুজ আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২০ পিএম

অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক মাহফুজ আলম বলেছেন, ‌‘আজ কোনো উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দিতে আসিনি। শুধু এটুকু বলতে চাই, মুজিববাদকে উপড়ে ফেলতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো— মুজিববাদের শেকড় বাংলাদেশে এত গভীরে প্রোথিত যে এটিকে সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক— সব দিক থেকেই মোকাবিলা করার মতো শক্তি আমরা এখনও গড়ে তুলতে পারিনি। ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের মতো কিছু উদ্যোগ ছাড়া এই লড়াইয়ে কার্যকর প্রস্তুতি খুব কমই দেখা গেছে।’

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহফুজ আলম বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর হামলা আমাদের নিজেদের ব্যর্থতার ফল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে চলমান সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমরা পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে পারিনি, ফলে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভেতর দিয়ে চার মূলনীতির ভিত্তিতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের আদলে যে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই মুজিববাদের হাত ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষের লাশ পড়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ টিকিয়ে রাখতে এ দেশের সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, আইনজীবীসহ রাষ্ট্রের নানা স্তরকে দখল করে নেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ সচেতনভাবে, আবার কেউ কেউ নিজেদের বিবেক বিক্রি করে এই প্রক্রিয়ার অংশ হয়েছে। এই অদৃশ্য দেশীয় ও বিদেশি অ্যাসেটদের বিরুদ্ধে একজন ওসমান হাদি দাঁড়িয়েছিলেন। দেশীয় অ্যাসেটরাই তাকে হত্যার যুক্তি তৈরি করেছে। আর যখন তার ওপর গুলি চালানো হলো, তখন অনেকেই নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়ে গেল।’

মাহফুজ আলম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমাদের হাতে এমন শক্তি ছিল যে আমরা মুজিববাদী ও আওয়ামী লীগ–১৪ দলীয় সন্ত্রাসীদের প্রতিটি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমরা সংগঠিত না হওয়ায় আজ তারা আবার সাহস পাচ্ছে। আমরা যদি ভুল করে ক্ষমা করে থাকি, তাহলে আজ প্রতিজ্ঞা নিতে হবে— আর কোনো ক্ষমা নয়। আমরা পুনর্মিলন, সত্য ও বিচার প্রক্রিয়ার কথা বলেছিলাম। আইসিটি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে স্বচ্ছ বিচারের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, একদিকে বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে আছে, আর অন্যদিকে অভিযুক্তরা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমার ভাইয়ের ওপর গুলি চালানো হয়েছে— এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি এই দেশে নিরাপদ না থাকি, তাহলে যারা ভারতের বা বিদেশি স্বার্থ রক্ষা করে, তারাও নিরাপদ থাকতে পারবে না। এটাই বাস্তবতা। শুধু রাজনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক লড়াইও গড়ে তুলতে হবে। ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের মতো উদ্যোগকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। জুলাইয়ের পক্ষে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং যারা মিডিয়া, শিক্ষা ও আইন অঙ্গনে জুলাইবিরোধী ভূমিকা রাখছে, তাদের সাংস্কৃতিকভাবেই প্রতিরোধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তি যদি গঠনমূলকভাবে সংগঠিত হয়, তাহলে চারদিক থেকে আসা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’

এএইচ/এফএ